Type a search term to find related articles by LIMS subject matter experts gathered from the most trusted and dynamic collaboration tools in the laboratory informatics industry.
শক্তি এবং বৃদ্ধির প্রয়োজনে জীব (উদ্ভিদ এবং প্রাণী) খাদ্য গ্রহণ করে। খাদ্যদ্রব্যগুলোর বিপাক এর কালে কিছু অপ্রয়োজনীয় পদার্থ সৃষ্টি করে। অপ্রয়োজনীয় এবং ক্ষতিকর বস্তুগুলো একটি বিশেষ প্রক্রিয়ায় দেহ থেকে নিষ্কাষিত হয়। প্রক্রিয়াটির নাম রেচন।
নিঃসরণ বা বহিঃষ্করণ এবং রেচন এক নয়। নিঃসরণে বস্তুসমূহ কোষ নির্গত হওয়ার পর নির্দিষ্ট কাজ সম্পন্ন করে। রেচন প্রক্রিয়ায় নিষ্কাষিত বস্তুগুলোকে বলা হয় রেচন পদার্থ। রেচন পদার্থগুলো সাধারণত ক্ষারীয় হয়। রেচন প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণকারী অঙ্গগুলোকে বলা হয় রেচন অঙ্গ।
ভার্টেব্রেটা প্রজাতির প্রাণীদের প্রধান রেচন অঙ্গ হল বৃক্ক, ফুসফুস, যকৃৎ এবং ত্বক।
এককোষী জীবসমূহে রেচন পদার্থসমূহ সরাসরি কোষের বাইরে নির্গত হয়।
জলজ প্রাণী সমূহ রেচন পদার্থ হিসেবে সাধারণত অ্যামোনিয়া ত্যাগ করে। অ্যামোনিয়া উচ্চমাত্রায় দ্রবণীয় বলে পানিতে এটা দ্রবীভূত থাকে।
পাখিরা নাইট্রোজেনজাত রেচন পদার্থ ইউরিক অ্যাসিড ত্যাগ করে।
ইনসেকটা শ্রেণির প্রাণীদের ম্যালপিজিয়ান নালিকা নামক রেচন অঙ্গ থাকে। ম্যালপিজিয়ান নালিকা রেচন পদার্থ সমূহ দেহের বাইরে ত্যাগ করে। কিছু রেচন পদার্থ মালপিজিয়ান নালিকায় আজীবনের জন্য সঞ্চিত থাকে।
প্রাণীদের তুলনায় উদ্ভিদের বিপাক ক্রিয়া ধীরগতিতে সম্পন্ন হয় এবং উদ্ভিদের নির্দিষ্ট রেচন অঙ্গ না থাকায় রেচন পদার্থের নিষ্কাশন ও একটি ধীর প্রক্রিয়া।
সবুজ উদ্ভিদ এবং ক্লোরোফিলবিহীন উদ্ভিদ অন্ধকারে শ্বসন এর সময় রেচন পদার্থ হিসেবে কার্বন ডাই অক্সাইড এবং জল উৎপন্ন করে। কার্বন ডাই অক্সাইড দিনের বেলায় সালোকসংশ্লেষএ ব্যবহৃত হয়ে যায়। সালোকসংশ্লেষের ফলে উৎপন্ন অক্সিজেন স্টোমাটা, আন্তঃকোষীয় ছিদ্র ইত্যাদির মাধ্যমে বের করে দেওয়া হয়। উদ্ভিদের অতিরিক্ত পানি প্রস্বেদন এর মাধ্যমে বের করে দেওয়া হয়। গাছের ঝরে যাওয়া পাতাতেও কিছু রেচন পদার্থ সঞ্চিত থাকতে দেখা যায়।
প্রাণীদের মতো উদ্ভিদের কোনো নির্দিষ্ট রেচন অঙ্গ থাকে না। উদ্ভিদের রেচন পদার্থ গাছের শুকনো ছাল, শুকনো পাতা ইত্যাদি মাধ্যমে পরিত্যক্ত হয়। অথবা অনেক সময় উদ্ভিদ মৃত বা জীবিত কোষে আলাদাভাবে সাময়িক রেচন পদার্থ জমা রাখে। নীচে উদ্ভিদের রেচনের কৌশল বর্ণনা করা হল।
(ক) জল-বিমোচন (Guttation): উদ্ভিদদেহের অতিরিক্ত অপ্রয়োজনীয় জল বাষ্পমোচনে পত্ররন্ধ্র মাধ্যমে বাইরে আসে। টমেটো, কচু ইত্যাদি উদ্ভিদে অতিরিক্ত জল জলের আকারে জলরন্ধ্র বা হাইডাথোড (Hydathodes) দিয়ে বেরিয়ে যায়। এই প্রক্রিয়াকে জল-বিমোচন বলা হয়।
(খ) পর্ণমোচন (Shedding of Leaves): অশ্বত্থ, শিমূল ইত্যাদি পর্ণমোচী উদ্ভিদে নির্দিষ্ট ঋতুতে পাতা ঝরে যায়। অন্যান্য চিরহরিৎ বৃক্ষে মাঝেমধ্যে কমবেশী পাতা ঝরে। তুলনামূলকভাবে গাছের পাতায় রেচন পদার্থ' বেশী জমা হয়। তাই পর্ণমোচনের সাথে সাথে রেচন পদার্থও দূরীভূত হয়।
(গ) বাকল-মোচন (Shedding of Bark): পেয়ারা, অর্জুন ইত্যাদি উদ্ভিদের ছালে জমা রেচন পদার্থ'গুলি বাকল-মোচনের সময় পরিত্যক্ত হয়।
(ঘ) ফল-মোচন (Shedding of Fruits): তেঁতুল, লেবু ইত্যাদি ফলে বিভিন্ন জৈব অ্যাসিড, যেমন-টারটারিক অ্যাসিড, সাইট্রিক অ্যাসিড রেচন পদার্থ হিসেবে জমা হয়। পরিণত ফল উদ্ভিদদেহ থেকে খসে পড়লে রেচন পদার্থ দূরীভূত হয়।
(ঙ) লিচিং (Leaching): স্থলজ উদ্ভিদের মূল থেকে অনেক রেচন পদার্থ চুইয়ে মাটিতে বেরিয়ে আসে।
(চ) গাম নিঃসরণ (Secretion of Gum): বাবলা, শিরীষ, সজনে প্রভৃতি গাছের ছাল থেকে গাম নিঃসৃত হয়ে রেচন পদার্থ দূরীভূত হয়।
(ছ) তরুক্ষীর নিঃসরণ (Secretion of Latex): রবার, বট ইত্যাদি উদ্ভিদের কাণ্ডে বা পাতায় আঘাত লাগলে রেচনপদার্থ তরুক্ষীর নির্গত হয়।
(জ) দেহের বিভিন্ন অংশে জমা রাখা (Storing in various parts of the Body): উদ্ভিদের রেচন পদার্থ অনেক সময় কোষের মধ্যে আলাদা করে জমা থাকে। ফলে অন্যান্য কোষগুলি দূষিত হয় না, যেমন-র্যাফাইড, সিস্টোলিথ কেলাস আকারে আলাদাভাবে উদ্ভিদের কোষেই জমা থাকে।[১]