Type a search term to find related articles by LIMS subject matter experts gathered from the most trusted and dynamic collaboration tools in the laboratory informatics industry.
আয়তন | ১,০১,৮০,০০০ কিমি২ (৩৯,৩০,০০০ মা২)[n] |
---|---|
জনসংখ্যা | ৭৪২,৪৫২,০০০[n] (২০১৩, ৩য়) |
জনঘনত্ব | ৭২.৯/কিমি২ (প্রায় ১৮৮/বর্গ মাইল) |
জাতীয়তাসূচক বিশেষণ | ইউরোপীয় |
দেশসমূহ | ৫০টি (এবং ৬টি আংশিকভাবে স্বীকৃত) |
ভাষাসমূহ | ভাষাসমূহের তালিকা |
সময় অঞ্চলসমূহ | ইউটিসি থেকে ইউটিসি+৬ |
ইন্টারনেট টিএলডি | .eu (ইউরোপীয় ইউনিয়ন) |
বৃহত্তম শহরসমূহ |
ইউরোপ একটি মহাদেশ যা বৃহত্তর ইউরেশিয়া মহাদেশীয় ভূখণ্ডের পশ্চিমের উপদ্বীপটি নিয়ে গঠিত। সাধারণভাবে ইউরাল ও ককেশাস পর্বতমালা, ইউরাল নদী, কাস্পিয়ান এবং কৃষ্ণ সাগর-এর জলবিভাজিকা এবং কৃষ্ণ ও এজিয়ান সাগর সংযোগকারী জলপথ ইউরোপকে এশিয়া মহাদেশ থেকে পৃথক করেছে।[৩]
ইউরোপের উত্তরে উত্তর মহাসাগর, পশ্চিমে আটলান্টিক মহাসাগর দক্ষিণে ভূমধ্যসাগর এবং দক্ষিণ-পূর্বে কৃষ্ণ সাগর ও সংযুক্ত জলপথ রয়েছে। যদিও ইউরোপের সীমানার ধারণা ধ্রুপদী সভ্যতায় পাওয়া যায়, তা বিধিবহির্ভূত; যেহেতু প্রাথমিকভাবে ভূ-প্রাকৃতিক শব্দ "মহাদেশ"-এ সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক উপাদান অন্তর্ভুক্ত।
ইউরোপ ভূপৃষ্ঠের দ্বারা বিশ্বের দ্বিতীয় ক্ষুদ্রতম মহাদেশ; ১,০১,৮০,০০০ বর্গকিলোমিটার (৩৯,৩০,০০০ মা২) বা ভূপৃষ্ঠের ২% এবং তার স্থলভাগের ৬.৮% জুড়ে রয়েছে। ইউরোপের প্রায় ৫০টি দেশের মধ্যে, রাশিয়া মহাদেশের মোট আয়তনের ৪০% ভাগ নিয়ে এ পর্যন্ত আয়তন এবং জনসংখ্যা উভয়দিক থেকেই বৃহত্তম, অন্যদিকে ভ্যাটিকান সিটি আয়তনে ক্ষুদ্রতম। ৭৩৯–৭৪৩ মিলিয়ন জনসংখ্যা বা বিশ্বের মোট জনসংখ্যার প্রায় ১১% নিয়ে ইউরোপ এশিয়া এবং আফ্রিকার তৃতীয় সবচেয়ে জনবহুল মহাদেশ।[৪] সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত মুদ্রা ইউরো।
ইউরোপ, বিশেষ করে প্রাচীন গ্রিস, পাশ্চাত্য সংস্কৃতির জন্মস্থান।[৫] এটি ১৫ শতকের শুরু থেকে আন্তর্জাতিক বিষয়াবলিতে প্রধান ভূমিকা পালন করে, বিশেষ করে উপনিবেশবাদ শুরু হবার পর থেকে। ১৬ থেকে ২০ শতকের মধ্যে, ইউরোপীয় দেশগুলির বিভিন্ন সময়ে আমেরিকা, অধিকাংশ আফ্রিকা, ওশেনিয়া, এবং অপ্রতিরোধ্যভাবে অধিকাংশ এশিয়া নিয়ন্ত্রণ করে। শিল্প বিপ্লব, যা ১৮ শতকের শেষেভাগে গ্রেট ব্রিটেনে শুরু হয়, পশ্চিম ইউরোপ এবং অবশেষে বৃহত্তর বিশ্বে আমূল অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক, এবং সামাজিক পরিবর্তন আনে। জনসংখ্যাতাত্ত্বিক বৃদ্ধি বোঝায়, ১৯০০ সাল দ্বারা, বিশ্বের জনসংখ্যায় ইউরোপের ভাগ ২৫% ছিল।[৬]
উভয় বিশ্বযুদ্ধ মূলত ইউরোপকে কেন্দ্র করে হয়, যার ফলে মধ্য ২০ শতকে বৈশ্বিক বিষয়াবলীতে পশ্চিম ইউরোপের আধিপত্যের অবসান ঘটে এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়ন তাদের প্রাধান্য বিস্তার করে।[৭] স্নায়ুযুদ্ধের সময়ে, ইউরোপ লৌহ পরদা বরাবর পশ্চিমে ন্যাটো ও পূর্বে ওয়ারশ চুক্তি দ্বারা বিভক্ত ছিল। কাউন্সিল অব ইউরোপ এবং পশ্চিম ইউরোপে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ইউরোপীয় একীকরণে ফলে গঠিত হয়, ১৯৮৯ সালের বিপ্লব ও ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর থেকে উভয় সংগঠন পূর্বদিকে বিস্তৃত হয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন আজকাল তার সদস্য দেশগুলোর উপর ক্রমবর্ধমান প্রভাব বিস্তার করছে। অনেক ইউরোপীয় দেশ নিজেদের মাঝে সীমানা এবং অভিবাসন নিয়ন্ত্রণ বিলুপ্ত করে।
ইউরোপের ক্লিকযুক্ত মানচিত্র, সবচেয়ে সাধারণভাবে ব্যবহৃত মহাদেশীয় সীমানা দেখাচ্ছে[৮]
চাবি: নীল: পার্শ্ববর্তী আন্তর্মহাদেশীয় রাষ্ট্র;
সবুজ: রাষ্ট্রগুলো ভৌগোলিকভাবে ইউরোপে নয়, কিন্তু রাজনৈতিক দিক থেকে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত[৯]
"ইউরোপ" শব্দটির ব্যবহার ইতিহাস জুড়ে ধীরে ধীরে বিকশিত হয়।[১০][১১] প্রাচীনকালে, গ্রিক ঐতিহাসিক হিরোডোটাস উল্লেখ করে যে, অজানা ব্যক্তি দ্বারা বিশ্বকে তিনটি ভাগে বিভক্ত করা হয়েছে, ইউরোপ, এশিয়া, এবং লিবিয়া (আফ্রিকা), নীল নদ এবং ফাসিস নদী তাদের সীমানা গঠন করে —যদিও তিনি আরোও উল্লেখ করেন যে, অনেকে ফাসিসের বদলে ডন নদীকে ইউরোপ ও এশিয়ার সীমানা হিসেবে মনে করে থাকে।[১২] ১ম শতকের ভূগোলবিদ স্ট্রাবো দ্বারা ডন নদীতে ইউরোপের পূর্ব সীমান্ত বলে সংজ্ঞায়িত করা হয়।[১৩] জুবিলিয়ম বইয়ে বর্ণিত যে, নূহ জমি হিসেবে মহাদেশগুলো তার তিন পুত্রকে দান করেন; ইউরোপ জিব্রাল্টার প্রণালীতে হারকিউলিসের স্তম্ভ পর্যন্ত প্রসারিত, উত্তর আফ্রিকা থেকে বিচ্ছিন্ন, ডনে এশিয়া থেকে পৃথক হিসাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়।[১৪]
৮ম শতাব্দীতে সমবেত লাতিন খ্রীষ্টানের দেশ হিসাবে ইউরোপের একটি সাংস্কৃতিক সংজ্ঞা, নতুন সাংস্কৃতিক ধারণার বোধক, যা জার্মানিক ঐতিহ্যের সঙ্গমস্থল এবং খ্রিস্টান-লাতিন সংস্কৃতির মাধ্যমে তৈরি এবং বাইজ্যান্টাইন ও ইসলামের আংশিক মিশ্রণে সঙ্গায়িত। এবং এই সংস্কৃতি, উত্তর আইবেরিয়া, ব্রিটিশ দ্বীপপুঞ্জ, ফ্রান্স, খ্রিষ্টীয় পশ্চিম জার্মানি, আলপাইন অঞ্চল এবং উত্তর ও মধ্য ইতালিতে সীমাবদ্ধ।[১৫] এই ধারণা ক্যারোলিং রেনেসাঁসের অন্যতম স্থায়ী নিদর্শন: প্রায়ই শার্লেমনের দরবারের পণ্ডিত, আলচুইনের চিঠির চরিত্র ইউরোপা।[১৬] এই বিভাগ—যতটা সাংস্কৃতিক ততটাই ভৌগোলিক—মধ্য যুগের শেষভাগের আগ পর্যন্ত, যখন এটা আবিষ্কারের যুগ দ্বারা প্রশ্নের সম্মুখীন হয়।[১৭][১৮] অবশেষে ১৭৩০ সালে ইউরোপ পুনঃনির্ধারণের সমস্যা সমাধান হয়েছে, যখন জলপথ পরিবর্তে, সুইডীয় ভূগোলবিদ এবং মানচিত্রকার ভন স্ট্রাহ্লেনবেরগ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পূর্ব সীমানা হিসেবে ইউরাল পর্বতমালা প্রস্তাবিত করেন, যা রাশিয়া এবং পুরো ইউরোপ সমর্থন করে।[১৯]
ইউরোপ এখন ইউরেশিয়ার পশ্চিম উপদ্বীপ বলে সাধারণত ভূগোলবিদ দ্বারা সংজ্ঞায়িত করা হয়। উত্তর, পশ্চিম ও দক্ষিণে বড় জল সংস্থা দ্বারা তার সীমানা চিহ্নিত; দূর পূর্বে ইউরোপের সীমা সাধারণত ইউরাল পর্বত, ইউরাল নদী, এবং কাস্পিয়ান সাগর; দক্ষিণপূর্বে ককেশাস পর্বতমালা, কৃষ্ণ সাগর এবং ভূমধ্য সাগরের সাথে সংযোগকারী কৃষ্ণ সাগরের জলপথ।[২০]
দ্বীপপুঞ্জগুলো সাধারণত সবচেয়ে কাছের মহাদেশীয় ভূখণ্ডের সঙ্গে দলবদ্ধ করা হয়, অতএব আইসল্যান্ড সাধারণত ইউরোপের অংশ হিসেবে বিবেচনা করা হয়, অন্যদিকে এর কাছাকাছি দ্বীপ সময় গ্রিনল্যান্ড সাধারণত উত্তর আমেরিকায় বরাদ্দ করা হয়। যাইহোক, সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক পার্থক্যের উপর ভিত্তি করে কিছু ব্যতিক্রম আছে। সাইপ্রাস, আনাতোলিয়ার (বা এশিয়া মাইনর) নিকটস্থ, কিন্তু সাধারণত সাংস্কৃতিক এবং রাজনৈতিকভাবে ইউরোপের অংশ বলে মনে করা হয় এবং বর্তমানে ইইউ-এর সদস্য রাষ্ট্র। মাল্টা শতাব্দী ধরে উত্তর আফ্রিকার একটি দ্বীপ বলে মনে করা হয়।
১৭৩০ সালে টানা ইউরোপ ও এশিয়ার মধ্যে ভৌগোলিক সীমানা কোন আন্তর্জাতিক সীমারেখা অনুসরণ করেনি। এর ফলে, রাজনৈতিক বা অর্থনৈতিক রেখায় ইউরোপকে সংগঠিত করার প্রচেষ্টায় ভূরাজনৈতিকভাবে এর নাম ব্যবহার উপায় সীমিত ভাবে[২১] শুধুমাত্র ইউরোপীয় ইউনিয়নের ২৮টি সদস্য রাষ্ট্রকে বোঝায়, বা আরোও বেশি একচেটিয়াভাবে, একটি সাংস্কৃতিক সংজ্ঞায়িত মূল হিসাবে। বিপরীতভাবে, ৪৭টি সদস্য রাষ্ট্রের কাউন্সিল অব ইউরোপ দ্বারা ইউরোপ ব্যাপকভাবে ব্যবহার করা হয়েছে,[২২] যার কিছু দেশ ইউরাল ও বসফরাস রেখা পার হয়ে যায়, সমস্ত সাইবেরিয়া এবং তুরস্ক এর অন্তর্ভুক্ত। উপরন্তু, ব্রিটিশ দ্বীপপুঞ্জের মানুষ "মহাদেশীয়" বা "মূল ভূখণ্ড" ইউরোপকে ইউরোপ বলে বুঝিয়ে থাকে।[২৩][২৪]
প্রাচীন গ্রিক পুরাণে, ইউরোপা একটি ফিনিশীয় রাজকুমারী ছিল যাকে জিউস একটি উজ্জ্বল আকারের সাদা ষাঁড় মনে করে অপহরণ করে। তিনি তাকে ক্রীট দ্বীপে নিয়ে যান যেখানে তিনি মিনস, রাদামান্থুস, ও সার্পেদনের জন্ম দেন। হোমারের জন্য, ইউরোপ (প্রাচীন গ্রিক: Εὐρώπη, Eurṓpēce names]]) ক্রীটের পৌরাণিক রাণী, একটি ভৌগোলিক স্থান না।
ইউরোপের ব্যুৎপত্তি নিশ্চিত নয়।[২৫] একটি মতবাদ মনে করে এটি গ্রিক εὐρύς (eurus) থেকে এসেছে, যার অর্থ "ব্যাপক, বিস্তৃত"[২৬] এবং ὤψ/ὠπ-/ὀπτ- (ōps/ōp-/opt-), যার অর্থ "চোখ, মুখ, মুখায়ব",[২৭] সেহেতু Eurṓpē, "প্রশস্ত দৃষ্টি", "বিস্তৃত মুখায়ব" (glaukōpis (γλαυκῶπις 'ধূসর নয়না') আথেনা বা boōpis (βοὠπις 'ষাঁড় নয়না') হেরার তুলনায়)। প্রশস্ত পুনর্নির্মিত প্রোটো-ইন্দো-ইউরোপীয় ধর্মে পৃথিবী নিজেরই একটি বর্ণনামূলক আখ্যান উল্লেখ আছে।[২৮] আরেকটি মতবাদ মনে করে যে এটি একটি সেমিটিক শব্দের উপর ভিত্তি করে উৎপত্তি যেমন আক্কাদীয় erebu যার অর্থ "নিচে যাওয়া, অস্ত"[২৯] (সূর্য প্রসঙ্গে), ফিনিশীয় থেকে কগনাট 'ereb "সন্ধ্যা; পশ্চিম" এবং আরবি মাগরেব, হিব্রু ma'arav (আরোও দেখুন পিআইই *h1regʷos, "অন্ধকার")। তবে, মার্টিন লিচফিল্ড ওয়েস্ট বলেন "শব্দবিদ্যাগতভাবে, ইউরোপার নাম এবং যে কোনো আকারের সেমিটিক শব্দের মধ্যের মিল খুব খারাপ"।[৩০]
পৌরাণিক চরিত্রের নামের উৎপত্তি যাই হোক না কেন, Εὐρώπη সর্ব প্রথম খ্রিস্টপূর্ব ৬ষ্ঠ শতাব্দীতে ভৌগোলিক শব্দ হিসাবে ব্যবহার করা হয় গ্রিক ভূগোলবিদ দ্বারা, আনাক্সিমান্দ্রোস এবং হেক্তায়েস। আনাক্সিমান্দ্রোস এশিয়া ও ইউরোপের মধ্যে সীমানা স্থাপন করেন ককেশাসের ফাসিস নদী বরাবর (আধুনিক রাইওনি), একটি প্রচল যা খ্রিস্টপূর্ব ৫ম শতাব্দীতে হেরোডোটাস দ্বারা অনুসৃত হয়।[৩১] এই প্রচল মধ্যযুগ দ্বারা গৃহীত এবং আধুনিক ব্যবহারে রোমান যুগ পর্যন্ত স্থায়ী ছিলো, কিন্তু সে যুগের লেখকগণ যেমন পসেদনিয়াস,[৩২] স্ট্রাবো[৩৩] এবং টলেমি,[৩৪] টানাইসকে (আধুনিক ডন নদী) সীমানা হিসেবে গ্রহণ করেন। সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে "ইউরোপ" শব্দটি প্রথম ৯ম শতাব্দীর ক্যারোলিং রেনেসাঁসয় ব্যবহার করা হয়। সে সময় থেকে, শব্দটি গোলকে পশ্চিম চার্চের প্রভাব বুঝাতে ব্যবহৃত, যার বিপরীতে উভয় ইস্টার্ন অর্থডক্স গির্জা এবং ইসলামী বিশ্ব রয়েছে। আধুনিক রীতি ১৯ শতকে "ইউরোপ"-এর আয়তন বাড়ায় কিছুটা পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্বে।
বিশ্বের অধিকাংশ প্রধান ভাষাসমূহে "ইউরোপা" উৎদ্ভুত শব্দ "মহাদেশ" (উপদ্বীপ) বোঝাতে ব্যবহৃত হয়। উদাহরণস্বরূপ, চীনায়, Ōuzhōu (歐洲) শব্দটি ব্যবহার করে; একটি অনুরূপ চীনা-প্রাপ্ত শব্দ Ōshū (欧州) কখনও কখনও জাপানিজে ব্যবহার করা হয যেমন ইউরোপীয় ইউনিয়নের জাপানি নাম, Ōshū Rengō (欧州連合), তা সত্ত্বেও কানাকাতা Yōroppa (ヨーロッパ) আরো সাধারণভাবে ব্যবহৃত। যদিও, কিছু তুর্কি ভাষায় মূলত ফার্সি নাম ফ্রাঙ্গিস্তান (ফ্র্যাঙ্কসের দেশ) সাধারণভাবে ইউরোপ বোঝাতে ব্যবহৃত হয়, এছাড়াও কিছু দাপ্তরিক ভাষা রয়েছে, যেমন আভরুপা বা ইভরোপা।[৩৫]
হোমো জর্জিকাস, যারা প্রায় ১৮ লক্ষ বছর আগে জর্জিয়ায় বাস করত, ইউরোপ আবিষ্কৃত হওয়া নিকটতম হোমিনিড।[৩৬] অন্যান্য হোমিনিডের অবশেষ, প্রায় ১০ লক্ষ বছর আগের, আতাপুয়ের্কা, স্পেনে আবিষ্কৃত হয়েছে।[৩৭] নিয়ানডার্থাল মানুষ (যা জার্মানির নিয়ানডার্থাল উপত্যকার নামে নামাঙ্কিত) দেড় লক্ষ বছর আগে ইউরোপে খোঁজ পাওয়া যায় এবং প্রায় ২৮,০০০ খ্রিষ্টপূর্বে জীবাশ্ম রেকর্ড থেকে হারিয়ে যায়, সম্ভবত জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এই বিলুপ্তি ঘটে, এবং তাদের চূড়ান্ত আশ্রয় ছিলো বর্তমান পর্তুগাল। নিয়ানডার্থাল প্রাক্মানব আধুনিক মানুষ (ক্রো-ম্যাগনন্স) দ্বারা প্রতিস্থাপিত হয়, যাদের ৪৩ থেকে ৪০ হাজার বছর আগে ইউরোপে খোঁজ পাওয়া যায়।[৩৮]
ইউরোপীয় নবপ্রস্তরযুগের সময়কাল—ফসল চাষ এবং পশু পালন, জনবসতির সংখ্যা বৃদ্ধি এবং মৃৎশিল্পের ব্যাপক ব্যবহার দ্বারা উল্লেখযোগ্য—গ্রিস ও বলকানে প্রায় ৭০০০ খ্রিস্টপূর্বে শুরু হয়, সম্ভবত আনাতোলিয়া এবং নিকট প্রাচ্যে আগের চাষ চর্চা দ্বারা প্রভাবিত।[৩৯] এটা বলকান থেকে দানিউব এবং রাইনের উপত্যকার বরাবর (লিনিয়ার মৃৎশিল্পের সংস্কৃতি) এবং ভূমধ্য উপকূল বরাবর (কার্ডিয়াল সংস্কৃতি) ছড়িয়ে পড়ে। খ্রিস্টপূর্ব ৪৫০০ থেকে ৩০০০-এর মধ্যে, এই কেন্দ্রীয় ইউরোপীয় নবপ্রস্তরযুগের সংস্কৃতি আরোও পশ্চিম ও উত্তরে বিকশিত হয় এবং সদ্য অর্জিত তামা শিল্পকর্ম উৎপাদনের দক্ষতা ছড়িয়ে পড়ে। পশ্চিম ইউরোপের নবপ্রস্তর যুগ বৃহৎ কৃষি জনবসতি ছাড়াও ক্ষেত্র সৌধ, যেমন মাটির পরিবেষ্টন, কবরের ঢিবি ও মেগালিথিক সমাধি দ্বারা চিহ্নিত।[৪০] তন্ত্রীযুক্ত সংস্কৃতি নবপ্রস্তর যুগ থেকে তাম্র যুগে রূপান্তরের সময়ে বিকশিত হয়। এই সময়কালে পশ্চিম এবং দক্ষিণ ইউরোপ জুড়ে বড় মেগালিথিক সৌধ নির্মাণ হয়, যেমন মাল্টার মেগালিথিক মন্দির এবং স্টোনহেঞ্জ।[৪১][৪২] খ্রিস্টপূর্ব ৩২০০-এ গ্রিসে ইউরোপীয় ব্রোঞ্জ যুগ শুরু হয়।[৪৩]
খ্রিস্টপূর্ব ১২০০-এ ইউরোপীয় লৌহযুগ শুরু হয়।[৪৪] লৌহযুগে গ্রিকরা উপনিবেশ স্থাপন করে এবং ফিনিশীয়রা শুরুর দিকের ভূমধ্য শহরগুলো স্থাপন করে। খ্রিস্টপূর্ব ৮ম শতাব্দীর কাছাকাছি সময়ে প্রারম্ভিক লৌহযুগের ইতালি ও গ্রিস ধীরে ধীরে ধ্রুপদি সভ্যতায় পদার্পণ করে।
প্রাচীন গ্রিস পাশ্চাত্য সভ্যতার প্রতিষ্ঠাতা সংস্কৃতি ছিল। পশ্চিমা গণতান্ত্রিক ও ব্যক্তিত্ববাদী সংস্কৃতির জন্য প্রায়ই প্রাচীন গ্রিসকে দায়ী করা হয়।[৪৫] গ্রিসরা পোলিস, বা শহর-রাজ্য উদ্ভাবন করে, যা তাদের পরিচয়ের ধারণায় একটি মৌলিক ভূমিকা পালন করে।[৪৬] এই গ্রিক রাজনৈতিক আদর্শ ১৮ শতাব্দীর শেষভাগে ইউরোপীয় দার্শনিক এবং আদর্শবাদী দ্বারা পুনরাবিষ্কৃত হয়। গ্রিসের অনেক সাংস্কৃতিক অবদান ছিলো: এরিস্টটল, সক্রেটিস এবং প্লেটোর অধীনে দর্শন, মানবতাবাদ এবং যুক্তিবাদে; হিরোডোটাস এবং থুসিডাইডিসের সাথে ইতিহাসে; নাটকীয় এবং আখ্যান আয়াতে, হোমারের মহাকাব্য কবিতা দিয়ে শুরু করে;[৪৫] সফোক্লিস এবং ইউরিপিডিসের সাথে নাটক, চিকিৎসায় হিপোক্রেটিস এবং গ্যালেন; এবং বিজ্ঞানে পিথাগোরাস, আর্কিমিডিস এবং ইউক্লিড।[৪৭][৪৮][৪৯]
আরেকটি প্রধান প্রভাব রোমান সাম্রাজ্য থেকে ইউরোপে এসে পাশ্চাত্য সভ্যতাকে প্রভাবিত করে, যা পাশ্চাত্য সভ্যতায় তার চিহ্ন রেখে যায় আইন, রাজনীতি, ভাষা, প্রকৌশল, স্থাপত্য, সরকার এবং আরো অনেক দিকে।[৫০] প্যাক্স রোমানার সময়, রোমান সাম্রাজ্যের সম্পূর্ণ ভূমধ্যসাগরীয় অববাহিকা এবং ইউরোপের অনেক অংশ পরিবেষ্টন করে।[৫১]
রোমান সম্রাটদের বৈরাগ্য পেত যেমন হাদ্রিয়ান, এন্তোনিনুস পিউস, ও মার্কাস উরেলাস, যারা জার্মানিক, পিক্তিস ও স্কটিশ গোষ্ঠীর যুদ্ধে সাম্রাজ্যের উত্তর সীমান্তে সব সময় অতিবাহিত করত।[৫২][৫৩] খ্রিষ্ট ধর্মকে প্রথম কনস্টান্টটাইন বৈধতা দেন তিন শতাব্দীর নির্যাতনের পরে।
রোমান সাম্রাজ্যের পতনের সময়, "স্থানান্তরণের যুগের" কারণে ইউরোপ দীর্ঘকালব্যাপী পরিবর্তনের মধ্যে অতিবাহিত হয়। বিভিন্ন জাতি যেমন অস্ট্রোগথ, ভিজিগথ, গথ, ভ্যান্ডাল, হুন, ফ্রাঙ্ক, এঙ্গেল, স্যাক্সন, স্লাভ, আভার, বুলগার এবং, পরে, ভাইকিং, পেচেনেগ, চুমান ও মাগিয়ার-এর মধ্যে অসংখ্য আক্রমণ, অধিবাসন ঘটে থাকে।[৫১] পেত্রারকের মত রেনেসাঁস চিন্তাবিদ পরে একে "অন্ধকার যুগ" বলে অভিহিত করে।[৫৪] পূর্বে বিচ্ছিন্ন যাজককেন্দ্রিক সম্প্রদায়ই লিখিত জ্ঞান সঙ্কলন ও সংরক্ষণ করার একমাত্র জায়গা ছিল; এর বাদে খুব কম লিখিত নথির খোঁজ পাওয়া যায়। ধ্রুপদী সভ্যতার আরো অনেক সাহিত্য, দর্শন, গণিত, ও অন্যান্য জ্ঞান পশ্চিম ইউরোপ থেকে হারিয়ে যায়, যদিও তা পূর্বে বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যে সংরক্ষিত করা হয়েছিলো।[৫৫]
৭ম শতাব্দী থেকে, মুসলিম আরব ঐতিহাসিকভাবে রোমান অঞ্চলের উপর অগ্রসর হওয়া শুরু করে। পরবর্তী শতাব্দী ধরে মুসলিম বাহিনী সাইপ্রাস, মাল্টা, ক্রীট, সিসিলি এবং দক্ষিণ ইতালি কিছু অংশ অধিকার করে নেয়।[৫৬] প্রাচ্যে, ভলগা বুলগেরিয়া ১০ম শতকের মধ্যে একটি ইসলামী রাষ্ট্র হয়ে ওঠে।[৫৭] ৭১১ থেকে ৭২০ সালের মধ্যে, আইবেরিয়ান উপদ্বীপ মুসলিম শাসনাধীনে আনা হয় — উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের (আস্তুরিয়াস) এবং মূলত পিরেনের বাস্ক অঞ্চল। এই অঞ্চল, আরবি নাম আল-আন্দালুস নামে বিস্তৃত উমাইয়া সাম্রাজ্যের অংশ হয়ে ওঠে।
অসফল কনস্ট্যান্টিনোপোলের দ্বিতীয় অবরোধ (৭১৭) উমাইয়া বংশকে দুর্বল করে এবং তাদের প্রতিপত্তি কমে যায়। তারপর ৭৩২ সালে ফ্রাঙ্কিস নেতা চার্লস মার্টেল পায্টৈযর্স যুদ্ধে উমাইয়াদের পরাজিত করে, যারফলে তাদের উত্তরাভিমুখে অগ্রযাত্রার সমাপ্তি ঘটে।
অন্ধকারাচ্ছন্ন যুগে, পশ্চিমা রোমান সাম্রাজ্য বিভিন্ন গোত্রদের নিয়ন্ত্রণে চলে যায়। জার্মানিক এবং স্লাভ গোত্ররা যথাক্রমে পশ্চিম এবং পূর্ব ইউরাপের উপর তাদের রাজ্য প্রতিষ্ঠা করে।[৫৮] অবশেষে প্রথম ক্লোভিসের অধীনে ফ্রাঙ্কিস গোত্র ঐক্যবদ্ধ হয়।[৫৯] ক্যারোলিঞ্জিয়ান রাজবংশের ফ্রাঙ্কিস রাজা শার্লেমেন, যে অধিকাংশ পশ্চিম ইউরোপ জয় করে, ৮০০ সালে পোপ দ্বারা "পবিত্র রোমান সম্রাট" নামে অভিষিক্ত করা হয়। এর ফলেই ৯৬২ সালে পবিত্র রোমান সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠিত হয়, যা শেষ পর্যন্ত মধ্য ইউরোপের জার্মান প্রিন্সিপালিটি কেন্দ্রিক হয়ে ওঠে।[৬০]
পূর্ব মধ্য ইউরোপে স্লাভিক রাজ্য প্রতিষ্ঠা হয় এবং খ্রিস্ট ধর্ম গৃহীত হয় (১০০০ খ্রিষ্টাব্দ নাগাদ)। গ্রেট মোরাভিয়ার শক্তিশালী পশ্চিম স্লাভিক রাষ্ট্র দক্ষিণে বলকান স্লাভ পর্যন্ত তার সীমানা বৃদ্ধি করে। প্রথম ভাতপ্লুকের অধীনে মোরাভিয়া তার বৃহত্তম আঞ্চলিক ব্যাপ্তি পৌঁছে এবং পূর্ব ফ্রান্সিয়ার সাথে ধারাবাহিক সশস্ত্র দ্বন্দ্বে লিপ্ত ছিলো। আরোও দক্ষিণে, ফ্রাঙ্কিস সাম্রাজ্য এবং the বাইজেন্টাইনের মধ্যে অবস্থিত, প্রথম দক্ষিণ স্লাভিক রাজ্য ৭ম এবং ৮ম শতাব্দীতে আবির্ভূত হয়: প্রথম বুলগেরীয় সাম্রাজ্য, সার্বীয় প্রিন্সিপালিটি (পরে রাজ্য এবং সাম্রাজ্য) এবং ক্রোয়েশিয়ার ডাচি (পরে ক্রোয়েশিয়া রাজ্য)। আরোও পূর্বে, কিয়েভান রুস তার রাজধানী প্রসারিত করে কিয়েভ পর্যন্ত, ১০ম শতাব্দীর মধ্যে ইউরোপের বৃহত্তম রাষ্ট্র হয়। ৯৮৮ সালে, গ্রেট ভ্লাদিমির রাষ্ট্র ধর্ম হিসেবে অর্থোডক্স খ্রিষ্ট ধর্ম গ্রহণ করে।
গ্রিক ভাষী অধ্যুষিত পূর্ব রোমান সাম্রাজ্য পশ্চিমে বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্য হিসেবে পরিচিত হয়ে ওঠে। এর রাজধানী ছিলো কনস্টান্টিনোপল। সম্রাট প্রথম জুথিনিয়ান কনস্টান্টিনোপললের প্রথম স্বর্ণযুগে শাসন করেন: তিনি আইনগত নিয়ম প্রতিষ্ঠা করেন, হাজিয়া সোফিয়া নির্মাণ তহবিল দেন এবং রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণের অধীনে খ্রিস্ট গির্জা আনেন।[৬১] বেশিরভাগ সময়ের জন্য, বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্য ইউরোপের সবচেয়ে শক্তিশালী, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক, এবং সামরিক বাহিনী ছিল। ১২০৪ সালে কনস্ট্যান্টিনোপোলের ধ্বংসসাধনে মারাত্মকভাবে দুর্বল, চতুর্থ ক্রুসেডের সময়,[৬২][৬৩][৬৪][৬৫][৬৬][৬৭][৬৮][৬৯][৭০] উসমানীয় সাম্রাজ্যের হাতে বাইজেন্টাইনের ১৪৫৩ সালে পতন ঘটে।[৭১][৭২][৭৩]
ইউরোপের অর্থনৈতিক বৃদ্ধির ইতিহাস প্রায় ১০০০ বছরের। মূল ভূখণ্ডে বাণিজ্যপথের নিরাপত্তার অভাবে ভূমধ্যসাগরের উপকূল বরাবর প্রধান বাণিজ্যপথ গড়ে উঠে। এই প্রসঙ্গে, কিছু উপকূলীয় শহরের অর্জিত ক্রমবর্ধমান স্বাধীনতা সামুদ্রিক প্রজাতন্ত্রকে ইউরোপীয় অঙ্গনে নেতৃস্থানীয় ভূমিকা এনে দিয়েছিলো।
মধ্যযুগে ইউরোপেরর সামাজিক কাঠামো উপরের দুইটি স্তর দ্বারা প্রভাবিত হয়েছে: আভিজাত্য এবং পাদরীবর্গ। প্রারম্ভিক মধ্য যুগে ফ্রান্সে সামন্ততন্ত্র বিকশিত হয় এবং শীঘ্রই ইউরোপ জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে।[৭৪] আভিজাত্য ও রাজতন্ত্রের মধ্যে ক্ষমতার দ্বন্দ্ব ম্যাগনা কার্টা লেখা এবং সংসদ প্রতিষ্ঠায় সাহায্য করেছিলো।[৭৫] ঐ সময়কালে সংস্কৃতির প্রধান উৎস ছিলো রোমান ক্যাথলিক চার্চ মঠ ও ক্যাথেড্রাল স্কুলের মাধ্যমে, চার্চ বেশিরভাগ ইউরোপের শিক্ষার ব্যবস্থা করে থাকে।[৭৪]
ভরা মধ্যযুগে পোপের শাসন ক্ষমতার শিখরে পৌঁছে। ১০৫৪ সালে পূর্ব পশ্চিম বিভেদ সাবেক রোমান সাম্রাজ্যকে ধর্মীয় দিক দিয়ে বিভক্ত করে, বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যের পূর্বের রক্ষণশীল চার্চ এবং প্রাক্তন পশ্চিম রোমান সাম্রাজ্যের মধ্যে রোমান ক্যাথলিক চার্চ। ১০৯৫ সালে পোপ দ্বিতীয় আরবান মুসলমানদের বিরুদ্ধে ধর্মযুদ্ধের ডাক দেয় জেরুসালেম ও পবিত্র ভূমি দখল করে রাখার জন্য।[৭৬] ইউরোপে চার্চের নিজেই ধর্মদ্রোহীদের বিরুদ্ধে তদন্তের আয়োজন করে। আইবেরিয় উপদ্বীপে সাত শতাব্দীর ইসলামী শাসন সমাপ্তি ঘটিয়ে ১৪৯২ সালে স্পেনে গ্রানাডা পতনের মাধ্যমে রিকনকুইসতার অবসিত হয়।[৭৭]
১১ ও ১২ শতাব্দীতে, যাযাবর তুর্কি উপজাতিদের দ্বারা অবিরত আক্রমণের ফলে, যেমন পেচেনেগ ও চুমান-কিপচাকে, উত্তরে নিরাপদ বনাঞ্চলে স্লাভিক জনসংখ্যার ব্যাপক অধিবাসন ঘটে। যার ফলে সাময়িকভাবে রুস' রাষ্ট্রের দক্ষিণ থেকে পূর্বে সম্প্রসারণ থেমে যায়।[৭৮] ইউরেশিয়ার অন্যান্য অনেক অংশের মতো, এই অঞ্চলও মঙ্গোল দ্বারা শাসিত হয়েছে।[৭৯] তাতার হিসাবে পরিচিত হয়ে ওঠে আগ্রাসকরা বেশিরভাগই তুর্কি-ভাষী মঙ্গোল শাসনের অধীনে ছিলো। তারা ক্রিমিয়ায় রাজধানী স্থাপন করে গোল্ডেন হর্দে রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করে, পরে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে আধুনিক দক্ষিণ ও মধ্য রাশিয়ায় তিন শতাব্দী বেশি সময় ধরে শাসন করেন।[৮০][৮১] মঙ্গোল রাজত্ব পতনের পর, ১৪ শতাব্দীতে প্রথমে রোমানিয়ান রাজ্যগুলো উঠে আসে: মলদোভা এবং ওয়ালাচিয়া। পূর্বে, এই অঞ্চলগুলো পেচেনেগ এবং চুমানের অধীনে ছিলো।[৮২] ১২ থেকে ১৫ শতাব্দীতে, মঙ্গোল শাসনের অধীনে মস্কোর গ্র্যান্ড ডিউকের জমিদারি ক্ষুদ্র রাজ্য থেকে ইউরোপের বৃহত্তম রাষ্ট্রে পরিণত হয়, ১৪৮০ সালে মঙ্গোল উৎখাত করে। পরবর্তীতে তারাই রাশিয়ার জার বংশে হয়ে উঠে। মহান তৃতীয় ইভান ও ভয়ানক ইভানের অধীনে দেশটি একত্রীত হয়, পরবর্তীতে শতকের পর শতক ধরে অটলভাবে পূর্ব ও দক্ষিণ দিকে বিস্তৃত হয়।
মধ্যযুগের শেষভাগে ইউরোপে আঘাত হানা প্রথম সংকট ছিলো ১৩১৫-১৩১৭ সালের মহাদুর্ভিক্ষ।[৮৩] ১৩৪৮ থেকে ১৪২০ সাল সময়কালে সবচেয়ে ভয়াবহ ক্ষতি হয়। ফ্রান্সের জনসংখ্যা অর্ধেকে পরিণত হয়।[৮৪][৮৫] মধ্যযুগীয় ব্রিটেন ৯৫টি দুর্ভিক্ষ দ্বারা আক্রান্ত হয়,[৮৬] এবং ফ্রান্সও একই সময়ের মধ্যে ৭৫টি বা তার বেশি দ্বারা আক্রান্ত হয়।[৮৭] মধ্য-১৪ শতাব্দীতে কালো মৃত্যুর কারণে ইউরোপ বিধ্বস্ত হয়, মানব ইতিহাসের সবচেয়ে মারাত্মক মহামারীর একটি, যার ফলে শুধুমাত্র ইউরোপের আনুমানিক আড়াই কোটি মানুষ মারা যায়—সে সময়ে তা ইউরোপীয় জনসংখ্যার এক-তৃতীয়াংশ।[৮৮]
প্লেগ ইউরোপের সামাজিক কাঠামোর উপর বিধ্বংসী প্রভাব ফেলে ছিলো; এটা জিওভান্নি বোক্কাচ্চোর দেকামেরোনে (১৩৫৩) চিত্রিত অবস্থার মত মানুষ বর্তমান মুহূর্তের জন্য বেঁচে থাকতে প্রবৃত হয়। এটা রোমান ক্যাথলিক চার্চের জন্য একটি গুরুতর আঘাত এবং এর ফলে ইহুদি, বিদেশি, ভিক্ষুক ও কুষ্ঠরোগীদের উপর নির্যাতন বৃদ্ধি করে।[৮৯] ১৮ শতাব্দীর আগ পর্যন্ত, প্রাবল্য ও মৃত্যুর হারের তারতাম্য নিয়ে প্লেগ প্রত্যেক প্রজন্মে ফিরে আসে বলে মনে করা হয়।[৯০] এই সময়কালে পুরো ইউরোপ ১০০-এর অধিক প্লেগ মহামারীতে আক্রান্ত হয়।[৯১]
সাংস্কৃতিক পরিবর্তনের সময়কাল রেনেসাঁস ফ্লোরেন্সে উদ্ভব হয়ে ১৪ শতাব্দীতে বাকি ইউরোপে ছড়িয়ে পড়ে। একটি নতুন মানবতাবাদের উত্থানের সাথে যাজককেন্দ্রিক পাঠাগার থেকে বিস্মৃত ধ্রুপদী গ্রিক এবং আরবি জ্ঞান পুনরুদ্ধার চলতে থাকে, যা প্রায়ই আরবী থেকে লাতিনে অনুবাদ করা হত।[৯২][৯৩][৯৪] রেনেসাঁস ১৪ থেকে ১৬ শতাব্দীর মধ্যে ইউরোপ জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। রাজকীয়, আভিজাত্য, রোমান ক্যাথলিক চার্চ, এবং একটি উঠতি বণিক শ্রেণীর যুগ্ম পৃষ্ঠপোষকতায় এতে শিল্প, দর্শন, সঙ্গীত, এবং বিজ্ঞানের উন্নতি সাধন হয়।[৯৫][৯৬][৯৭] ফ্লোরেনটাইনের ব্যাংকার পরিবার মেদিচি এবং রোমের পোপ সহ, ইতালির পৃষ্ঠপোষকরা, প্রতিভাবান কোয়াত্রোসেন্তো ও সিঙ্কেসেন্তো শিল্পীদের যেমন রাফায়েল, মাইকেলেঞ্জেলো, ও লিওনার্দো দা ভিঞ্চি পৃষ্ঠপোষকতা করেন।[৯৮][৯৯]
মধ্য ১৪ শতকের চার্চের রাজনৈতিক চক্রান্ত পশ্চিমা বিভেদ সৃষ্টি করে। এই চল্লিশ বছর সময়ে, দুই জন পোপ চার্চের শাসনভার দাবী করে—একটি আভিগনন ও অপরটি রোমে। এই বিভেদ অবশেষে ১৪১৭ সালে মিটমাট হয়ে গেলেও পোপের পদ আধ্যাত্মিক কর্তৃপক্ষ ব্যাপকভাবে ভুক্তভোগী হয়েছিলো।[১০০]
চার্চের ক্ষমতা প্রোটেস্ট্যান্ট সংস্কারের (১৫১৭–১৬৪৮) ফলে আরোও দুর্বল হয়ে পড়ে, যা প্রথমে জার্মান ধর্মতত্ত্ববিদ মার্টিন লুথারের কাজের দ্বারা কাজ দ্বারা আলোচনায় আসে চার্চের মধ্যে সংস্কার অভাবের ফলে। এছাড়াও সংস্কার পবিত্র রোমান সাম্রাজ্যের ক্ষমতা ক্ষতিগ্রস্ত করে। জার্মান রাজপুত্রগণ প্রোটেস্ট্যান্ট এবং রোমান ক্যাথলিকে বিভক্ত হয়ে ওঠে।[১০১] এটাই ঘটনাক্রমে ত্রিশ বছরের যুদ্ধের (১৬১৮–১৬৪৮) কারণ হয়ে দাঁড়ায়, যার ফলে পবিত্র রোমান সাম্রাজ্য পঙ্গু হয় এবং অনেক জার্মানি বিধ্বস্ত হয়। জার্মানির জনসংখ্যার ২৫ থেকে ৪০ শতাংশ লোক মারা যায়।[১০২] ওয়েস্টফালিয়া শান্তির পরে, ইউরোপে ফ্রান্সের প্রাধান্য বেড়ে দাঁড়ায়>[১০৩]
দক্ষিণ, মধ্য ও পূর্ব ইউরোপে ১৭ শতাব্দী সাধারণ পতনের সময়কাল।[১০৪] মধ্য ও পূর্ব ইউরোপে, ২০০ বছরে ১৫০১ সাল থেকে ১৭০০ সালের মধ্যে ১৫০-এর বেশি দুর্ভিক্ষ হয়।[১০৫] ১৫ থেকে ১৮ শতাব্দীতে, যখন রাশিয়া ভেঙ্গে যাওয়া গোল্ডেন হর্দের খানাত জয় করে, তখন ক্রিমিয়ান খানাতের তাতার দাস ধরার জন্য পূর্ব স্লাভিক ভূমিতে ঘন ঘন অভিযান চালায়।[১০৬] ১৬৮৩ সালে ভিয়েনার যুদ্ধ ইউরোপে উসমানীয় তুর্কিদের অগ্রসর হওয়া থামিয়ে দেয়, ও মধ্য ইউরোপের হাবসবুর্গ রাজবংশের রাজনৈতিক কর্তৃত্বের জানান দেয়। নোগাই হর্দে ও কাজাখ খানাত অন্তত একশ বছর ধরে রাশিয়া, ইউক্রেন ও পোল্যান্ডের স্লাভিক-ভাষী এলাকায় ঘন ঘন অভিযান চালায়, রুশ সম্প্রসারণ এবং অধিকাংশ উত্তর ইউরেশিয়া বিজিত না হওয়া পর্যন্ত(অর্থাৎ পূর্ব ইউরোপ, মধ্য এশিয়া এবং সাইবেরিয়া)।
আবিষ্কারের যুগ, অনুসন্ধানের সময়, উদ্ভাবন এবং বৈজ্ঞানিক উন্নয়নের শুরু বলে রেনেসাঁস এবং নতুন রাজকীয় চিহ্নিত করা হয়েছে।[১০৭] ১৬ এবং ১৭ শতাব্দীর পাশ্চাত্য বৈজ্ঞানিক বিপ্লবের মহান ব্যক্তিদের মধ্যে কোপারনিকাস, কেপলার, গ্যালিলিও, এবং আইজ্যাক নিউটন ছিল।[১০৮] পিটার বারেটের মতে, "এটা ব্যাপকভাবে গৃহীত যে, 'আধুনিক বিজ্ঞান' ১৭ শতাব্দীর (রেনেসাঁসের শেষ দিকে) ইউরোপে বেড়ে উঠেছিলো, প্রাকৃতিক বিশ্ব বোঝার নতুন পরিচায়ক।"[৯২] ১৫ শতাব্দীতে, সেসময় সর্বশ্রেষ্ঠ নৌ ক্ষমতার দুই দেশ পর্তুগাল এবং স্পেন, সারা বিশ্ব অন্বেষণে দ্বায়িত্ব নেয়।[১০৯][১১০] ক্রিস্টোফার কলম্বাস ১৪৯২ সালে নিউ ওয়ার্ল্ডে পৌঁছান এবং ভাস্কো দা গামা ১৪৯৮ সালে পূর্বে সমুদ্রপথ খুঁজে বের করেন। পরে স্প্যানীয় ও পর্তুগিজ আমেরিকা এবং এশিয়ায় ঔপনিবেশিক সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করে।[১১১] শীঘ্রই ফ্রান্স, নেদারল্যান্ড এবং ইংল্যান্ড তাদের অনুসরণ করে আফ্রিকা, আমেরিকা, এশিয়ায় বিশাল ঔপনিবেশিক সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করে।
১৮ শতাব্দীতে, বৈজ্ঞানিক ও যুক্তি-ভিত্তিক চিন্তাধারা প্রচারে নবজাগরণের যুগ একটি শক্তিশালী বুদ্ধিবৃত্তিক আন্দোলন ছিল।[১১২][১১৩][১১৪] ফ্রান্সের রাজনৈতিক ক্ষমতার উপর অভিজাততন্ত্র ও পাদরীবর্গের একচেটিয়া অধিকারের ফলে জন-অসন্তোষ বাড়তে থাকে, যার ফলে ফরাসি বিপ্লব ঘটে এবং প্রথম প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠা পায়। এর ফলে প্রাথমিকভাবে সন্ত্রাসের রাজত্বে অনেক রাজকীয় এবং আভিজাত্য প্রাণ হারায়।[১১৫] ফরাসি বিপ্লবের পরবর্তীকালে নেপোলিয়ন বোনাপার্ট ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয় এবং প্রথম ফরাসি সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা পায়। নেপলীয় যুদ্ধের সময় যা বেড়ে ইউরোপের বৃহৎ অংশ পরিবেষ্টন করে, ১৮১৫ সালে ওয়াটারলু যুদ্ধে পতন ঘটে।[১১৬][১১৭] নেপোলিয়নের শাসনের ফলে ফরাসি বিপ্লবের আদর্শের আরও প্রচার পায়, যার মাঝে জাতি-রাষ্ট্রের সাথে সাথে প্রশাসন, আইন, এবং শিক্ষার ফরাসি মডেলের ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতা পায়।[১১৮][১১৯][১২০] নেপোলিয়নের পতনের পর ভিয়েনার কংগ্রেস সমবত হয় এবং ইউরোপের ক্ষমতার একটি নতুন ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করে, পাঁচ "বড় শক্তির" উপর কেন্দ্রীভূত করে: যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, প্রুশিয়া, অস্ট্রিয়া, এবং রাশিয়া।[১২১] ১৮৪৮ সালের বিপ্লবের আগ পর্যন্ত এই ভারসাম্য বজায় থাকে, এই সময় উদারপন্থী বিদ্রোহ রাশিয়া ও গ্রেট ব্রিটেন ছাড়া সমস্ত ইউরোপকে প্রভাবিত করে। শেষ পর্যন্ত রক্ষণশীল উপাদান এবং কিছু সংস্কারের ফলে বিপ্লব থেমে যায়।[১২২] ১৮৫৯ সালে ছোট রাজ্যগুলো থেকে রোমানিয়া জাতি-রাষ্ট্র রূপে একত্রিত হয়। ১৮৬৭ সালে, অস্ট্রো-হাঙ্গেরীয় সাম্রাজ্য গঠিত হয়; এবং ১৮৭১ সালে ছোট রাজ্যগুলো থেকে জাতি-রাষ্ট্র হিসেবে উভয় ইতালি ও জার্মানি একত্রীকরণ হয়।[১২৩]
সমান্তরালভাবে, রুশ-তুর্কি যুদ্ধে (১৭৬৮-১৭৭৪) তুর্কিদের পরাজয়ের পর প্রাচ্য সমস্যা আরোও জটিল আকার ধারণ করে। উসমানীয় সাম্রাজ্যের ভাঙ্গন আসন্ন মনে করে, বড় শক্তিগুলো উসমানীয় অংশে তাদের কৌশলগত ও বাণিজ্যিক স্বার্থ রক্ষার চেষ্টা করতে থাকে। এই পতন থেকে রুশ সাম্রাজ্য লাভবান হয়, অন্যদিকে উসমানীয় সাম্রাজ্যের সংরক্ষণ হাবসবুর্গ সাম্রাজ্য এবং ব্রিটেনের স্বার্থের অনূকুলে থাকবে। এদিকে, সার্বীয় বিপ্লব এবং গ্রিক স্বাধীনতা যুদ্ধ বলকানে জাতীয়তাবাদের জন্ম হিসেবে চিহ্নিত হয়।[১২৪] ১৮৭৮ সালে বার্লিনের কংগ্রেসে মন্টিনিগ্রো, সার্বিয়া এবং রোমানিয়ার কার্যত স্বাধীন রাজ্যের আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেয়া হয়।
গ্রেট ব্রিটেনে ১৮ শতাব্দীর শেষভাগে শিল্প বিপ্লব শুরু হয়ে পুরো ইউরোপজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। উদ্ভাবন ও নতুন প্রযুক্তির বাস্তবায়নের ফলে দ্রুত শহুরে বৃদ্ধি, ব্যাপক কর্মসংস্থান, এবং একটি নতুন শ্রমিক শ্রেণীর উত্থান ঘটে।[১২৫] এর ফলে সামাজিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে সংস্কার সাধিত হয়, যার মাঝে শিশু শ্রমের উপর প্রথম আইন, ট্রেড ইউনিয়ন বৈধকরণ,[১২৬] এবং দাসত্ব বিলুপ্তি ছিলো।[১২৭] ব্রিটেনে, ১৮৭৫ সালে জনস্বাস্থ্য আইন প্রণয়ন করা হয়, যার ফলে অনেক ব্রিটিশ শহরে জীবনযাত্রার মানের উল্লেখযোগ্য উন্নতি হয়।[১২৮] ইউরোপের জনসংখ্যা ১৭০০ সালের ১০ কোটি থেকে ১৯০০ সালের মধ্যে ৪০ কোটিতে বেড়ে দাঁড়ায়।[১২৯] পশ্চিম ইউরোপের শেষ দুর্ভিক্ষ, আইরিশ আলু দুর্ভিক্ষের ফলে আইরিশ লক্ষ লক্ষ মানুষের মৃত্যু ও ব্যাপক দেশান্তর ঘটে।[১৩০] ১৯ শতাব্দীতে, ৭ কোটি মানুষ ইউরোপ ছেড়ে বিদেশে বিভিন্ন ইউরোপীয় উপনিবেশ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অধিবাসিত হয়।[১৩১]
দুইটি বিশ্বযুদ্ধ এবং একটি অর্থনৈতিক মন্দা বিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধে আধিপত্য বিস্তার করে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ ১৯১৪ থেকে ১৯১৮-এর মধ্যে সংঘটিত হয়। যুগোস্লাভ জাতীয়তাবাদী[১৩৭] গাভ্রিলো প্রিন্সিপ দ্বারা অস্ট্রিয়ার আর্চডিউক ফ্রানজ ফার্দিনান্দ হত্যার মাধ্যমে এই যুদ্ধ শুরু হয়।[১৩৮] অধিকাংশ ইউরোপীয় দেশগুলো এই যুদ্ধে লড়াই করেছে, যা আঁতাত শক্তি (ফ্রান্স, বেলজিয়াম, সার্বিয়া, পর্তুগাল, রাশিয়া, যুক্তরাজ্য, এবং পরে ইতালি, গ্রিস, রোমানিয়া, এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র) এবং অক্ষ শক্তি (অস্ট্রিয়া-হাঙ্গেরি, জার্মানি, বুলগেরিয়া, এবং উসমানীয় সাম্রাজ্য) মধ্যে সংগঠিত হয়। এই যুদ্ধে সামরিক ও বেসামরিক মিলিয়ে ১৬০ লক্ষের বেশি মানুষ মারা যায়।[১৩৯] ৬ কোটির বেশি ইউরোপীয় সৈন্য ১৯১৪ থেকে ১৯১৮-এর এই যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে।[১৪০]
রাশিয়ায় রুশ বিপ্লব ঘটে, যা জার রাজতন্ত্রকে উৎখাত করে সাম্যবাদ সোভিয়েত ইউনিয়ন প্রতিস্থাপন করে।[১৪১] অস্ট্রিয়া-হাঙ্গেরি এবং উসমানীয় সামাজ্য ভেঙ্গে গিয়ে পৃথক দেশে ভাগ হয় এবং অন্যান্য অনেক দেশ তাদের সীমানা পুনরায় বিন্যস্ত করে। ভার্সাই চুক্তির মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে ১৯১৯ সালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধর সমাপ্তি ঘটে। চুক্তিটি জার্মানির প্রতি কঠোর ছিল এবং যুদ্ধের জন্য পূর্ণ দায়িত্ব জার্মানির উপর চাপানো হয় এবং ভারী নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে।[১৪২]
প্রথম বিশ্বযুদ্ধ সময়কাল এবং রুশ গৃহযুদ্ধ (যুদ্ধোত্তর দুর্ভিক্ষ সহ) মিলিয়ে রাশিয়া মোট মৃত্যুর পরিমাণ ১৮০ লক্ষে দাঁড়ায়।[১৪৩] ১৯৩২–১৯৩৩-এ, স্তালিনের নেতৃত্বে সোভিয়েত কর্তৃপক্ষ শস্য বাজেয়াপ্ত করার ফলে দ্বিতীয় সোভিয়েত দুর্ভিক্ষ হয়, যাতে লক্ষ লক্ষ লোক মারা যায়;[১৪৪] জীবিত কৃষক-মহাজনদের নির্যাতন করা হয় এবং অনেককে জোরপূর্বক শ্রম নিয়োজিত করতে গুলাগে পাঠানো হয়েছিলো। এছাড়াও ১৯৩৭–৩৮-এর গ্রেট পার্জের জন্য স্তালিন দায়ী, যাতে এনকেভিডি ৬৮১,৬৯২ জনের মৃত্যুদন্ড কার্যকর করে;[১৪৫] সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রত্যন্ত এলাকায় লক্ষ লক্ষ মানুষ বহিষ্কৃত ও নির্বাসিত হয়।[১৪৬]
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ঋণ এবং জার্মানিকে ঋণ দ্বারা সৃষ্ট অর্থনৈতিক অস্থিরতা, ১৯২০ ও ১৯৩০-এর দশকে ইউরোপে ব্যাপক ধ্বংস সাধন করে। এটা এবং ১৯২৯-এর ওয়াল স্ট্রিট বিপর্যয় বিশ্বব্যাপী মহামন্দা ডেকে আনে। অর্থনৈতিক সংকট, সামাজিক অস্থিরতা, সাম্যবাদের হুমকি, ও ফ্যাসীবাদী আন্দোলনের সহায়তায় ইউরোপ জুড়ে নাৎসি জার্মানিতে আডলফ হিটলার, স্পেনে ফ্রান্সিসকো ফ্রাঙ্কো, ইতালিতে বেনিতো মুসোলিনিকে ক্ষমতায় নিয়ে আসে।[১৪৭][১৪৮]
১৯৩৩ সালে, হিটলার জার্মানির নেতা হয়ে ওঠে এবং বৃহত্তর জার্মানি নির্মাণের লক্ষ্যে কাজ শুরু করেন। জার্মানি পুনরায় প্রসারিত হয়ে ১৯৩৫ এবং ১৯৩৬ সালে সারল্যান্ড এবং রাইনল্যন্ড দখল করে নেয়। ১৯৩৮ সালে, আঞ্চলাসের পরে অস্ট্রিয়া জার্মানির একটি অংশ হয়ে ওঠে। পরে সেই বছরই, জার্মানি, ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য এবং ইতালি মিউনিখ চুক্তি স্বাক্ষর করে। জার্মানি সুদেতেনল্যান্ড দ্বারা সংযুক্ত হয়, যা জাতিগত জার্মানরা দ্বারা অধ্যুষিত চেকোস্লোভাকিয়ার একটি অংশ ছিলো। ১৯৩৯ সালের প্রথম দিকে চেকোস্লোভাকিয়ার অবশিষ্টাংশ জার্মানি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত বোহেমিয়া ও মোরাভিয়ার প্রটেকটোরেট ও স্লোভাক প্রজাতন্ত্রে বিভক্ত হয়। ঐ সময়ে, ব্রিটেন ও ফ্রান্স তুষ্ট করার নীতি অবলম্বন করছিলো।
ডানজিগের ভবিষ্যতকে কেন্দ্র করে জার্মানি ও পোল্যান্ডের মধ্যে চাপা উত্তেজনা বাড়তে থাকে, জার্মানরা সোভিয়েত দিকে সরে গিয়ে এবং মলতভ-রিবেন্ত্রপ চুক্তি স্বাক্ষর করে, যা সোভিয়েতকে বাল্টিক রাষ্ট্রগুলো এবং পোল্যান্ড ও রোমানিয়ার অংশ আক্রমণ করার অনুমোদন দেয়। জার্মানি ১ সেপ্টেম্বর ১৯৩৯ সালে পোল্যান্ড আক্রমণ করে, যা ৩ সেপ্টেম্বর জার্মানির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণায় ফ্রান্স এবং যুক্তরাজ্যকে প্ররোচনা যোগায়। এর ফলে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ইউরোপীয় রণক্ষেত্র উন্মুখ হয়।[১৪৯][১৫০] পোল্যান্ডে সোভিয়েত আক্রমণ ১৭ সেপ্টেম্বর শুরু করে এবং শীঘ্রই পোল্যান্ডের পতন ঘটে। ২৪ সেপ্টেম্বর, সোভিয়েত ইউনিয়ন বাল্টিক দেশগুলো ও পরে ফিনল্যান্ড আক্রমণ করে। ব্রিটিশ সৈন্য নারভিকে অবতরণ করে এবং ফিনল্যান্ডকে সাহায্য করার জন্য সৈন্য পাঠায়। কিন্তু তাদের অবতরণের প্রধান উদ্দেশ্য ছিলো জার্মানিকে ঘিরে ফেলা এবং জার্মানদের স্ক্যান্ডেনেভীয় উৎস থেকে সাহায্য বন্ধ করা। প্রায় একই সময়, জার্মানি ডেনমার্কে সৈন্য প্রেরণ করে। এবং অপ্রকৃত যুদ্ধ অব্যাহত থাকে।
১৯৪০ সালের মে-তে, জার্মানি নিচু দেশের মাধ্যমে ফ্রান্স আক্রমণ করে। ফ্রান্স ১৯৪০-এর জুনে শর্তাধীনভাবে আত্মসমর্পণ করে। আগস্ট দ্বারা জার্মানি ব্রিটেনে আক্রমণাত্মক বোমা বর্ষণ শুরু করে, কিন্তু ব্রিটেন দখল করতে ব্যর্থ হয়।[১৫১] ১৯৪১ সালে, জার্মানি অপারেশন বারবারোসার মাধ্যমে সোভিয়েত ইউনিয়ন আক্রমণ করে।[১৫২] ১৯৪১ সালে ৭ ডিসেম্বর জাপানের পার্ল হারবার আক্রমণ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পাশাপাশি ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের মিত্র এবং অন্যান্য মিত্র বাহিনীকেও যুদ্ধে জড়িয়ে ফেলে।[১৫৩][১৫৪]
১৯৪৩ সালে স্তালিনগ্রাদের যুদ্ধের পর, সোভিয়েত ইউনিয়নে জার্মান আক্রমণ ক্রমাগত পিছিয়ে যায়। ইতিহাসে বৃহত্তম ট্যাংক যুদ্ধে জড়িত কুর্স্কের যুদ্ধ পূর্ব রণাঙ্গনে শেষ বড় জার্মান আক্রমণ ছিলো। ১৯৪৪ সালে, ব্রিটিশ এবং মার্কিন বাহিনী ডি-ডে অবতরণের মাধ্যমে ফ্রান্স আক্রমণ করে জার্মানি বিপক্ষে নতুন যুদ্ধক্ষেত্র খোলে। ১৯৪৫ সালে বার্লিন পতনের মাধ্যমে ইউরোপে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হয়। মানব ইতিহাসের সবচেয়ে বৃহত্তম ও ধ্বংসাত্মক যুদ্ধে পৃথিবী জুড়ে ৬ কোটি মানুষ মারা যায়।[১৫৫] ইউরোপে ৪ কোটির বেশি মানুষ দ্বিতীয় যুদ্ধের ফলে মারা যায়,[১৫৬] যার মাঝে ১১০ থেকে ১৭০ লক্ষ লোক হলোকস্টের দ্বারা মারা যায়।[১৫৭] যুদ্ধে সোভিয়েত ইউনিয়ন ২৭০ লক্ষ লোক হারায় (বেশিরভাগই বেসামরিক), দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের হতাহতের প্রায় অর্ধেক।[১৫৮] দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষে, ইউরোপে ৪ কোটির বেশি লোক উদ্বাস্তু ছিলো।[১৫৯] মধ্য ও পূর্ব ইউরোপের বেশ কিছু যুদ্ধোত্তর বিতাড়নের ফলে প্রায় মোট ২ কোটি লোক বাস্তুচ্যুত হয়।[১৬০]
প্রথম বিশ্বযুদ্ধ এবং বিশেষ করে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ বিশ্বের সম্পর্কের ক্ষেত্রে পশ্চিম ইউরোপের প্রাধান্য খর্ব করে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইয়াল্টা সম্মেলনে ইউরোপের মানচিত্রে প্রজাতন্ত্রগুলো পুনঃবিন্যস্ত হয় এবং দুই ব্লকে বিভক্ত করা হয়, পশ্চিমা দেশ এবং সাম্যবাদী পূর্ব ব্লক, যা পরে উইনস্টন চার্চিল একটি "লৌহ পর্দা" বলে অভিহিত করেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিম ইউরোপ ন্যাটো জোট প্রতিষ্ঠিত করে এবং পরে সোভিয়েত ইউনিয়ন ও মধ্য ইউরোপ ওয়ারশ চুক্তি সাক্ষর করে।[১৬১]
নতুন দুটি পরাশক্তি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়ন পারমাণবিক বিস্তার কেন্দ্রীভূত, পঞ্চাশ বছরের দীর্ঘ স্নায়ুযুদ্ধে লিপ্ত হয়। একই সময়ে উপনিবেশবাদ শেষ হতে শুরু করে, যা প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরেই শুরু হয়, ধীরে ধীরে এশিয়া ও আফ্রিকায় ইউরোপীয় উপনিবেশিকতা শেষ হয়ে অঞ্চলগুলো স্বাধীনতা লাভ করতে শুরু করে।[৭] ১৯৮০ সালে মিখাইল গর্বাচেভের সংস্কার এবং পোল্যান্ডে সলিডারিটি আন্দোলনের ফলে পূর্ব ব্লকের পতন ঘটে এবং স্নায়ুযুদ্ধের সমাপ্তি ঘটে। দুই জার্মানি একত্রিত হয়, ১৯৮৯ সালে বার্লিন প্রাচীরের পতনের পর এবং মধ্য ও পূর্ব ইউরোপের মানচিত্রে আরো একবার প্রজাতন্ত্র গুলো বিন্যস্ত হয়।[১৪৭]
ইউরোপীয় একত্রীকরণ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে শুরু হয়। একটি একক অর্থনৈতিক নীতি এবং সাধারণ বাজারে লক্ষ্যে ১৯৫৭ সালে রোম চুক্তির মাধ্যমে ছয় পশ্চিম ইউরোপের দেশের মধ্যে ইউরোপীয় অর্থনৈতিক গোষ্ঠী প্রতিষ্ঠিত হয়।[১৬২] ১৯৬৭ সালে ইইসি, ইউরোপীয় কয়লা ও ইস্পাত গোষ্ঠী এবং ইউরাটম, ইউরোপীয় গোষ্ঠী গঠন করে, যা ১৯৯৩ সালে ইউরোপীয় ইউনিয়নে রূপ নেয়। ইউ একটি সংসদ, আদালত এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করে এবং একক মুদ্রা হিসেবে ইউরো চালু করে।[১৬৩] ২০০৪ এবং ২০০৭ সালে, আরো মধ্য ও পূর্ব ইউরোপীয় দেশগুলো যোগ দান করে এর বর্তমান সদস্য সংখ্যা ২৮-এ উন্নীত করে।[১৬৪]
ইউরোপীয় উপদ্বীপ ইউরেশীয় ভূখণ্ডের পশ্চিমা পঞ্চমাংশ গঠন করে।[২০] এটা অন্য যে কোনো মহাদেশ বা উপমহাদেশের চেয়ে ভূখণ্ডের তুলনায় উপকূলের উচ্চ অনুপাত রয়েছে।[১৬৫] এর সমুদ্র সীমা উত্তরে আর্কটিক মহাসাগর, পশ্চিমে আটলান্টিক মহাসাগর, এবং দক্ষিণে ভূমধ্যসাগর, কৃষ্ণ, এবং কাস্পিয়ান সমুদ্র।[১৬৬] ইউরোপের ভূমিতে অপেক্ষাকৃত ছোট এলাকার মধ্যে বেশি তারতম্য দেখা যায়। দক্ষিণাঞ্চল বেশি পর্বতময়, অন্যদিকে উত্তরে যেতে যেতে উঁচু আল্পস, পিরেনে, এবং কার্পেথীয় থেকে ভূখণ্ড নিচু হতে থাকে, উঁচু পাহাড়ি ভূমির মধ্য দিয়ে পূর্বে বিশাল, বিস্তৃত, কম উত্তর সমতলে। এই বর্ধিত নিম্নভূমি বড় ইউরোপীয় সমভূমি হিসাবে পরিচিত, এবং এর মূল উত্তর জার্মান সমভূমিতে অবস্থিত। গ্রেট ব্রিটেন ও আয়ারল্যান্ড দ্বীপের পশ্চিম অংশ থেকে শুরু হয়ে উঁচু একটা চাপ উত্তর-পশ্চিম সমুদ্রতীর বরাবর বিদ্যমান, এবং তা নরওয়ের পর্বতময়, সমুদ্রের খাঁড়ি কাটা বরাবর চলতে থাকে।
এই বিবরণ সরলীকৃত। উপ-অঞ্চল যেমন আইবেরিয়ান উপদ্বীপ এবং ইতালীয় উপদ্বীপের নিজস্ব জটিল বৈশিষ্ট্য রয়েছে, তেমনি মূল ভূখণ্ডের মধ্য ইউরোপেরও আছে। যেখানে ভূখণ্ডের অনেক মালভুমি, নদী উপত্যকা এবং অববাহিকা রয়েছে যা সাধারণ গতিধারা জটিল করে তোলে। উপ-অঞ্চল যেমন আইসল্যান্ড, ব্রিটেন, এবং আয়ারল্যান্ড আলাদা বৈশিষ্ট্য ধারণ করে। পূর্ববর্তী ভূখণ্ড উত্তর মহাসাগরের অবস্থিত যা ইউরোপের অংশ হিসাবে গণনা করা হয়, অপরদিকে পরবর্তী পাহাড় এলাকা মূল ভূখণ্ডে যোগ দিয়েছিলো, যা পরে ক্রমবর্ধমান সমুদ্র স্তরের বৃদ্ধির ফলে আলাদা হয়ে যায়।
ইউরোপ প্রধানত শীতপ্রধান জলবায়ু অঞ্চলে অবস্থিত, এতে পশ্চিমা ঝঞ্ঝা বিরাজ করে।
উপসাগরীয় প্রবাহের প্রভাবের কারণে পৃথিবী চারপাশে একই অক্ষাংশের অন্যান্য এলাকায় তুলনায় এর জলবায়ু বেশ নাতিশীতোষ্ণ ধরনের হয়।[১৬৭] উপসাগরীয় প্রবাহের ডাক নাম "ইউরোপের কেন্দ্রীয় উষ্ণতা", কারণ এটা ইউরোপের জলবায়ু উষ্ণ এবং আর্দ্র করে তোলে। উপসাগরীয় প্রবাহ ইউরোপের উপকূল উষ্ণ আর্দ্রতা বয়ে আনার সাথে সাথে আটলান্টিক মহাসাগর থেকে আসা পশ্চিমা ঝঞ্ঝাকে উষ্ণ করে তোলে।
এর ফলে সারা বছর ধরে নেপলসের গড় তাপমাত্রা ১৬ °সে (৬০.৪ °ফা), যখন একই অক্ষাংশে অবস্থিত নিউ ইয়র্ক সিটিতে শুধুমাত্র ১২ °সে (৫৩.৬ °ফা)। বার্লিন, জার্মানি; কাল্গারি, কানাডা; এবং ইরখুটস্ক, রাশিয়ার এশীয় অংশ, প্রায় একই অক্ষাংশ অবস্থিত; জানুয়ারিতে বার্লিনের গড় তাপমাত্রা প্রায় ৮ °সি (৪৬.৪ °ফা), যা কালগারি থেকে বেশি, এবং ইরখুটস্ক গড় তাপমাত্রা থেকে প্রায় ২২ °সে (৭১.৬ °ফা) বেশি।[১৬৭]
ইউরোপের ভূতত্ত্ব অতিশয় বৈচিত্রময় এবং জটিল, স্কটিয় উচ্চভূমি থেকে হাঙ্গেরির ঢালাই সমভূমি পর্যন্ত মহাদেশ জুড়ে বিভিন্ন ভূদৃশ্য দেখতে পাওয়া যায়।[১৬৮]
ইউরোপের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য উচ্চভূমি ও পার্বত্য দক্ষিণ ইউরোপ এবং পূর্বে ইউরাল পর্বতমালা থেকে পশ্চিমে একটি সুবিশাল, আংশিকভাবে সমুদ্রগর্ভপথে, উত্তর সমতল আয়ারল্যান্ডের মধ্যে বৈপরীত্য। এই দুই অংশ পিরেনে পর্বত চেইন এবং আল্পস/কার্পেথীয় দ্বারা বিভক্ত। উত্তর সমতল স্ক্যানডিনেভীয় পর্বতমালা এবং ব্রিটিশ দ্বীপপুঞ্জের পর্বতময় অংশ দ্বারা পশ্চিমে চিহ্নিত করা হয়। উত্তর সমতলের প্রধান অগভীর জলাশয় হলো, কেল্টীয় সাগর, উত্তর সাগর, বাল্টিক সাগর এবং বারেন্ট সাগর।
উত্তর সমতলে পুরোনো ভূতাত্ত্বিক বালটিকা মহাদেশ রয়েছে, এবং তাই ভূতাত্ত্বিকভাবে "প্রধান মহাদেশ" হিসাবে গণ্য করা যেতে পারে, অন্যদিকে দক্ষিণ ও পশ্চিমে পেরিফেরাল উচ্চ ভূমি ও পার্বত্য অঞ্চল অন্যান্য বিভিন্ন ভূতাত্ত্বিক মহাদেশ থেকে খন্ডাংশ গঠন করে। পশ্চিম ইউরোপের বেশিরভাগ পুরোনো ভূতত্ত্ব সবচেয়ে প্রাচীন ক্ষুদ্র মহাদেশ আভালোনিয়ার অংশ হিসেবে ছিল।
প্রায় ২.২৫ বিলিয়ন বছর আগে, বাল্টিক শিল্ড (ফেনোস্ক্যান্ডিয়া) এবং সারমাতিয়ান ক্রাটন গঠনে ইউরোপের ভূতাত্ত্বিক ইতিহাস খুঁজে পাওয়া যায়। এর পর ভলগো-ইউরালিয়া শিল্ড, এই তিনটি একসঙ্গে পূর্ব ইউরোপীয় ক্রাটন (≈ বালটিকা) গঠন করে, যা অতিবিশাল মহাদেশ কলাম্বিয়ার একটি অংশ হয়ে ওঠে। প্রায় ১.১ বিলিয়ন বছর আগে, বালটিকা এবং আর্কটিকা (লাওরেন্টিয়া ব্লকের অংশ হিসেবে) রডিনিয়ায় যোগদান করে, পরে পুনঃবিভক্ত হয়ে প্রায় ৫৫০ মিলিয়ন বছর আগে সংস্কার হয়ে বালটিকা রূপ ধারণ করে। প্রায় ৪৪০ মিলিয়ন বছর আগে, বালটিকা এবং লাওরেন্টিয়া থেকে ইউরামেরিকা গঠিত হয়; তারপরে গন্ডোয়ানা যুক্ত হয়ে পাঞ্জিয়া গঠন করে। প্রায় ১৯০ মিলিয়ন বছর আগে, গন্ডোয়ানা এবং লাওরাশিয়া আটলান্টিক মহাসাগরের প্রসারের কারণে বিভক্ত হয়। অবশেষে, এবং পরবর্তিতে খুব শীঘ্রই, লাওরাশিয়া নিজেই আবার লাওরেন্টিয়া (উত্তর আমেরিকা) এবং ইউরেশীয় মহাদেশ মধ্যে বিভক্ত হয়। এই দুইয়ের মাঝে গ্রীনল্যান্ডের মাধ্যমে যথেষ্ট সময় ধরে ভূ-সংযোগ থাকে, ফলে এদের মাঝে প্রাণীজগত আদানপ্রদান চলতে থাকে। প্রায় ৫০ মিলিয়ন বছর আগে থেকে, সমুদ্র স্তরের হ্রাস বৃদ্ধির ফলে ইউরোপের প্রকৃত আকৃতি এবং এর অন্যান্য মহাদেশ যেমন এশিয়ার সাথে সংযোগ নির্ধারিত হয়। ইউরোপের বর্তমান আকৃতি প্রায় পাঁচ মিলিয়ন বছর আগে টারশিয়ারি যুগের শেষ ভাগে দেখতে পাওয়া যায়।[১৬৯]
সহস্রাব্দ ধরে কৃষিজ মানুষের সাথে সাথে বসবাস করে, ইউরোপের প্রাণী ও উদ্ভিদ মানুষের উপস্থিতিও কার্যক্রম দ্বারা গভীরভাবে প্রভাবিত হয়েছে। ফেনোস্ক্যান্ডিয়া এবং উত্তর রাশিয়া, বিভিন্ন জাতীয় উদ্যান ছাড়া, বর্তমানে প্রাকৃতিক বনাঞ্চল ইউরোপে কমই পাওয়া যায়।
ইউরোপে মিশ্র বন বেশি দেখতে পাওয়া যায়। এখানে বৃদ্ধির জন্য পরিবেশ খুব অনুকূল। উত্তরাঞ্চলে উপসাগরীয় প্রবাহ এবং উত্তর আটলান্টিক চালন মহাদেশকে উষ্ণ রাখে। দক্ষিণ ইউরোপকে একটি উষ্ণ, কিন্তু মৃদু জলবায়ু হিসাবে বর্ণনা করা যেতে পারে। এই অঞ্চলে প্রায়শই গ্রীষ্মকালে খরা হয়। এছাড়াও পর্বত ঢালের পরিবেশকে প্রভাবিত করে। কিছু পাহাড় (আল্পস, পাইরেনেস) পূর্ব-পশ্চিম ভিত্তিক এবং বায়ুকে মহাসাগর থেকে প্রচুর পানি অভ্যন্তর বহন করার সুযোগ করে দেয়। অন্যান্য গুলো (স্ক্যান্ডিনেভিয় পর্বতমালা, দিনারিদস, কার্পেথীয়, আপেন্নিস) দক্ষিণ-উত্তর ভিত্তিক এবং পাহাড়ে পড়া বৃষ্টি যেহেতু প্রাথমিকভাবে সমুদ্রের দিকে যায়, সেহেতু এই দিকে বনাঞ্চল ভালো হয়, আবার অপরদিকে পরিবেশ ততটা অনুকূল নয়। ইউরোপের মূল ভূখণ্ডের প্রায়ই কোনো না কোনো সময়ে পশু পালিত হত, এবং প্রাক কৃষিজ কেটে ফেলায় মূল উদ্ভিদ ও প্রাণী বাস্তুতন্ত্র ব্যাহত হয়।
ইউরোপের ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ সম্ভবত একসময় বন দ্বারা আবৃত ছিল।[১৭০] এটা ভূমধ্যসাগর থেকে আর্কটিক মহাসাগর পর্যন্ত প্রসারিত। যদিও ইউরোপের মূল বনের অর্ধেক বন শতাব্দী ধরে চলা অরণ্যবিনাশ-এর মাধ্যমে উজাড় হয়, তারপরেও ইউরোপে মোট জমির এক চতুর্থাংশে উপর বন আছে। যেমন স্ক্যান্ডিনেভিয়ার এবং রাশিয়ার তৈগা, ককেশাসের মিশ্র অতিবৃষ্টি অরণ্য এবং পশ্চিম ভূমধ্যসাগরের কর্ক ওক বন। সাম্প্রতিক সময়ে, বন উজাড় ক্রমশ কমে এসেছে এবং অনেক গাছ রোপণ করা হয়েছে। যাইহোক, অনেক ক্ষেত্রে মূল মিশ্র প্রাকৃতিক বন প্রতিস্থাপনে কনিফারে রোপিত হচ্ছে, কারণ তা দ্রুত বাড়ে। বৃক্ষরোপন এখন সুবিশাল এলাকা বিস্তার করে, কিন্তু বিভিন্ন প্রজাতির পশু পাখীর জন্য তা উৎকৃষ্ট আবাসস্থল নয়, কারণ তাতে বিভিন্ন প্রজাতির গাছপালা ও বৈচিত্র্যময় বন গঠন কাঠামো নেই। পশ্চিম ইউরোপে প্রাকৃতিক বনের পরিমাণ মাত্র ২–৩% বা তার কম, যা ইউরোপীয় রাশিয়ায় ৫–১০%। বনাঞ্চলে সবচেয়ে ক্ষুদ্রতম শতাংশের দেশ আইসল্যান্ড (১%), এবং বৃহত্তম ফিনল্যান্ড (৭৭%)।[১৭১]
শীতপ্রধান ইউরোপে, উভয় সূঁচালো এবং সরলবর্গীয় গাছ দ্বারা মিশ্র বন আধিপত্য দেখা যায়। মধ্য ও পশ্চিম ইউরোপের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রজাতি হলো বীচ ও ওক গাছ। উত্তরাঞ্চলে তৈগা একটি স্পুস–পাইন–বার্চ দ্বারা মিশ্র বন; আরও উত্তরে রাশিয়া এবং উত্তর স্ক্যান্ডিনেভিয়ার মধ্যে, তৈগা তুন্দ্রাকে জায়গা করে দেয় যে আর্কটিক অগ্রসরমান হয়। ভূমধ্যসাগরে, অনেক জলপাই গাছ রোপণ করা হয়েছে, যা খুব ভালোভাবে ঊষর জলবায়ুতে অভিযোজিত হয়েছে; আরো ব্যাপকভাবে দক্ষিণ ইউরোপে ভূমধ্যসাগরীয় সরলবর্গীয় চিরহরিৎ রোপণ করা হয়। আধা শুষ্ক ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে অনেক ঝোপঝাড় দেখতে পাওয়া যায়। ইউরেশীয় তৃণভূমির পূর্ব-পশ্চিমে একটি সংকীর্ণ অংশ পূর্বে ইউক্রেন, দক্ষিণে রাশিয়া প্রসারিত হয়ে হাঙ্গেরিতে শেষ হয় এবং উত্তরে তৈগার মধ্যে অনুপ্রস্থভাবে পার দেয়।
সবচেয়ে সাম্প্রতিক তুষার যুগে হিমবাহ এবং মানুষের উপস্থিতি ইউরোপীয় প্রাণীজগতের বিস্তার প্রভাবিত করে। ইউরোপের বহু অংশে সবচেয়ে বড় প্রাণী এবং শীর্ষ শিকারী প্রজাতি শিকার করার মাধ্যমে বিলুপ্ত হয়ে গেছে। পশমতুল্য ম্যামথ নব্য প্রস্তর যুগের শেষের আগেই বিলুপ্ত হয়েছে। এসময়ে নেকড়ে (মাংসাশী) এবং ভালুক বিপন্ন। একদা এরা ইউরোপের অধিকাংশ অংশে পাওয়া যেত। তবে, বন উজাড় এবং শিকার এই পশুদের আরোও এবং আরোও দূরে ঠেলে দেয়। মধ্যযুগ দ্বারা, ভালুকের আবাসস্থল যথেষ্ট বন আচ্ছাদনসহ অনধিগম্য পর্বত মধ্যেই সীমাবদ্ধ হয়। আজ, বাদামী ভালুক বলকান উপদ্বীপ, স্ক্যান্ডিনেভিয়া, এবং রাশিয়া প্রাথমিকভাবে বাস করে; কিছু সংখ্যক ভালুক ইউরোপের অন্যান্য দেশে (অস্ট্রিয়া, পিরেনে ইত্যাদি) দেখতে পাওয়া যায়, কিন্তু এইসব অঞ্চলে বাসস্থান ধ্বংস কারণে বাদামি ভালুকের জনসংখ্যা খণ্ডিত এবং প্রান্তিক। উপরন্তু, মেরু ভালুক স্বালবার্ড পাওয়া যেতে পারে, স্ক্যান্ডিনেভিয়ার উত্তরে একটি নরওয়েজীয় দ্বীপমালা। নেকড়ে, বাদামি ভালুক পর ইউরোপের দ্বিতীয় বৃহত্তম শিকারি প্রাণী, প্রাথমিকভাবে মধ্য ও পূর্ব ইউরোপ ও বলকানে এবং কিছু সংখ্যক পশ্চিম ইউরোপে (স্ক্যান্ডিনেভিয়া, স্পেন, ইত্যাদি) দেখতে পাওয়া যায়।
ইউরোপীয় বন্য বিড়াল, শিয়াল (বিশেষ করে লাল শিয়াল), বিভিন্ন প্রজাতির মার্টেনস, সজারু এবং বিভিন্ন প্রজাতির সরীসৃপ (যেমন সাপ) এবং উভচর, বিভিন্ন পাখি (পেঁচা, বাজপাখি এবং শিকারি পাখি) ইউরোপে দেখতে পাওয়া যায়।
শামুক, শুককীট, মাছ, বিভিন্ন পাখি, এবং স্তন্যপায়ী যেমন তীক্ষ্ণদন্ত প্রাণী, হরিণ এবং শুয়োর গুরুত্বপূর্ণ ইউরোপীয় তৃণভোজী প্রাণী। এবং অন্যদের মধ্যে পাব্র্বত্য মূষিক, স্টেইনবক, হরিণসদৃশ পার্বত্য ছাগল পর্বতে বাস করে। বিভিন্ন পোকামাকড়, যেমন ছোট কচ্ছপের ত্বকের প্রজাপতি, জীব বৈচিত্র্য বৃদ্ধি করে।[১৭৪]
বামন জলহস্তী এবং বামন হাতি বিলুপ্তি ভূমধ্য দ্বীপপুঞ্জের মানুষের নিকটতম আগমনের সাথে যুক্ত করা যায়।[১৭৫]
সামুদ্রিক প্রাণীসকল ইউরোপীয় উদ্ভিদ ও প্রাণীজগতের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। সামুদ্রিক উদ্ভিদ প্রধানত ফাইটোপ্ল্যাঙ্কটন। ইউরোপীয় সমুদ্রের গুরুত্বপূর্ণ প্রাণী জু প্ল্যাংকটন, বিভিন্ন চিংড়ি, স্কুইড, অক্টোপাস, মাছ, ডলফিন, এবং তিমি।
কাউন্সিল অব ইউরোপের বার্ন কনভেনশন দ্বারা ইউরোপে জীব বৈচিত্র্য সুরক্ষিত হয়, যা ইউরোপীয় সম্প্রদায়ের সাথে সাথে অ-ইউরোপীয় দেশগুলো দ্বারা স্বাক্ষরিত হয়েছে।
নিচের তালিকায় সমস্ত সত্তা বিভিন্ন সাধারণ সংজ্ঞা, এমনকি আংশিকভাবে পতিত, ভৌগোলিক বা রাজনৈতিকভাবে ইউরোপে রয়েছে। প্রদর্শিত তথ্য সূত্র প্রতি ক্রস রেফারেন্সড নিবন্ধ অনুসারে।
পতাকা | প্রতীক | নাম | আয়তন (কিমি²) |
জনসংখ্যা |
জনসংখ্যার ঘনত্ব (প্রতি কিমি²) |
রাজধানী | দাপ্তরিক ভাষায় নাম |
---|---|---|---|---|---|---|---|
আলবেনিয়া | ২৮,৭৪৮ | ২,৮৩১,৭৪১ | ৯৮.৫ | তিরানা | Shqipëria | ||
অ্যান্ডোরা | ৪৬৮ | ৬৮,৪০৩ | ১৪৬.২ | আন্দরা লা ভেলিয়া | Andorra | ||
আর্মেনিয়া [j] | ২৯,৮০০ | ৩,২২৯,৯০০ | ১০১ | ইয়েরেভান | Hayastan | ||
অস্ট্রিয়া | ৮৩,৮৫৮ | ৮,১৬৯,৯২৯ | ৯৭.৪ | ভিয়েনা | Österreich | ||
আজারবাইজান [k] | ৮৬,৬০০ | ৯,১৬৫,০০০ | ১০৫.৮ | বাকু | Azǝrbaycan | ||
বেলারুশ | ২০৭,৫৬০ | ৯,৪৫৮,০০০ | ৪৫.৬ | মিন্স্ক | Belarus | ||
বেলজিয়াম | ৩০,৫২৮ | ১১,০০৭,০০০ | ৩৬০.৬ | ব্রাসেল্স | België/Belgique/Belgien | ||
বসনিয়া ও হার্জেগোভিনা | ৫১,১২৯ | ৩,৮৪৩,১২৬ | ৭৫.২ | সারায়েভো | Bosna i Hercegovina | ||
বুলগেরিয়া | ১১০,৯১০ | ৭,৬২১,৩৩৭ | ৬৮.৭ | সফিয়া | Bălgarija | ||
ক্রোয়েশিয়া | ৫৬,৫৪২ | ৪,৪৩৭,৪৬০ | ৭৭.৭ | জাগরেব | Hrvatska | ||
সাইপ্রাস [d] | ৯,২৫১ | ৭৮৮,৪৫৭ | ৮৫ | নিকোসিয়া | Kýpros/Kıbrıs | ||
চেক প্রজাতন্ত্র | ৭৮,৮৬৬ | ১০,২৫৬,৭৬০ | ১৩০.১ | প্রাগ | Česká republika | ||
ডেনমার্ক | ৪৩,০৯৪ | ৫,৫৬৪,২১৯ | ১২৯ | কোপেনহেগেন | Danmark | ||
ইস্তোনিয়া | ৪৫,২২৬ | ১,৩৪০,১৯৪ | ২৯ | তাল্লিন | Eesti | ||
ফিনল্যান্ড | ৩৩৬,৫৯৩ | ৫,১৫৭,৫৩৭ | ১৫.৩ | হেলসিঙ্কি | Suomi/Finland | ||
ফ্রান্স [g] | ৫৪৭,০৩০ | ৬৩,১৮২,০০০ | ১১৫.৫ | প্যারিস | France | ||
জর্জিয়া [l] | ৬৯,৭০০ | ৪,৬৬১,৪৭৩ | ৬৪ | তিবিলিসি | Sakartvelo | ||
জার্মানি | ৩৫৭,০২১ | ৮৩,২৫১,৮৫১ | ২৩৩.২ | বার্লিন | Deutschland | ||
গ্রিস | ১৩১,৯৫৭ | ১১,১২৩,০৩৪ | ৮০.৭ | অ্যাথেন্স | Elláda | ||
হাঙ্গেরি | ৯৩,০৩০ | ১০,০৭৫,০৩৪ | ১০৮.৩ | বুদাপেস্ট | Magyarország | ||
আইসল্যান্ড | ১০৩,০০০ | ৩০৭,২৬১ | ২.৭ | রেইকিয়াভিক | Ísland | ||
আয়ারল্যান্ড | ৭০,২৮০ | ৪,২৩৪,৯২৫ | ৬০.৩ | ডাবলিন | Éire/Ireland | ||
ইতালি | ৩০১,২৩০ | ৫৯,৫৩০,৪৬৪ | ১৯৭.৭ | রোম | Italia | ||
কাজাখস্তান [i] | ২,৭২৪,৯০০ | ১৫,২১৭,৭১১ | ৫.৬ | আস্তানা | Qazaqstan/Kazahstan | ||
লাতভিয়া | ৬৪,৫৮৯ | ২,০৬৭,৯০০ | ৩৪.২ | রিগা | Latvija | ||
লিশটেনস্টাইন | ১৬০ | ৩২,৮৪২ | ২০৫.৩ | ফাডুৎস | Liechtenstein | ||
লিথুয়ানিয়া | ৬৫,২০০ | ২,৯৮৮,৪০০ | ৪৫.৮ | ভিলনিউস | Lietuva | ||
লুক্সেমবুর্গ | ২,৫৮৬ | ৪৪৮,৫৬৯ | ১৭৩.৫ | লুক্সেমবুর্গ | Lëtzebuerg/Luxemburg/Luxembourg | ||
ম্যাসেডোনিয়া | ২৫,৭১৩ | ২,০৫৪,৮০০ | ৮১.১ | স্কপইয়ে | Makedonija | ||
মাল্টা | ৩১৬ | ৩৯৭,৪৯৯ | ১,২৫৭.৯ | ভাল্লেত্তা | Malta | ||
মলদোভা [a] | ৩৩,৮৪৩ | ৪,৪৩৪,৫৪৭ | ১৩১.০ | কিশিনেভ | Moldova | ||
মোনাকো | ১.৯৫ | ৩১,৯৮৭ | ১৬,৪০৩.৬ | মোনাকো | Monaco | ||
মন্টিনিগ্রো | ১৩,৮১২ | ৬১৬,২৫৮ | ৪৪.৬ | পোডগোরিকা | Crna Gora | ||
নেদারল্যান্ডস [h] | ৪১,৫২৬ | ১৬,৯০২,১০৩ | ৩৯৩.০ | আমস্টারডাম | Nederland | ||
নরওয়ে | ৩৮৫,১৭৮ | ৫,০১৮,৮৩৬ | ১৫.৫ | অসলো | Norge/Noreg | ||
পোল্যান্ড | ৩১২,৬৮৫ | ৩৮,৬২৫,৪৭৮ | ১২৩.৫ | ওয়ার্সা | Polska | ||
পর্তুগাল [e] | ৯১,৫৬৮ | ১০,৪০৯,৯৯৫ | ১১০.১ | লিসবন | Portugal | ||
রোমানিয়া | ২৩৮,৩৯১ | ২১,৬৯৮,১৮১ | ৯১.০ | বুখারেস্ট | România | ||
রাশিয়া [b] | ১৭,০৭৫,৪০০ | ১৪২,২০০,০০০ | ৮.৩ | মস্কো | Rossiya | ||
সান মারিনো | ৬১ | ২৭,৭৩০ | ৪৫৪.৬ | সান মারিনো | San Marino | ||
সার্বিয়া [f] | ৮৮,৩৬১ | ৭,১২০,৬৬৬ | ৯১.৯ | বেলগ্রেড | Srbija | ||
স্লোভাকিয়া | ৪৮,৮৪৫ | ৫,৪২২,৩৬৬ | ১১১.০ | ব্রাতিস্লাভা | Slovensko | ||
স্লোভেনিয়া | ২০,২৭৩ | ২,০৫০,১৮৯ | ১০১ | লিউব্লিয়ানা | Slovenija | ||
স্পেন | ৫০৪,৮৫১ | ৪৭,০৫৯,৫৩৩ | ৯৩.২ | মাদ্রিদ | España | ||
সুইডেন | ৪৪৯,৯৬৪ | ৯,০৯০,১১৩ | ১৯.৭ | স্টকহোম | Sverige | ||
সুইজারল্যান্ড | ৪১,২৯০ | ৭,৫০৭,০০০ | ১৭৬.৪ | বের্ন | Schweiz/Suisse/Svizzera/Svizra | ||
তুরস্ক [m] | ৭৮৩,৫৬২ | ৭৫,৬২৭,৩৮৪ | ৯৮ | আঙ্কারা | Türkiye | ||
ইউক্রেন | ৬০৩,৭০০ | ৪৮,৩৯৬,৪৭০ | ৮০.২ | কিয়েভ | Ukrajina | ||
যুক্তরাজ্য | ২৪৪,৮২০ | ৬১,১০০,৮৩৫ | ২৪৪.২ | লন্ডন | United Kingdom | ||
ভ্যাটিকান সিটি | ০.৪৪ | ৯০০ | ২,০৪৫.৫ | ভ্যাটিকান সিটি | Città del Vaticano | ||
মোট | ১০,১৮০,০০০[n] | ৭৪২,০০০,০০০[n] | ৭০ |
নিচে উল্লিখিত রাষ্ট্রগুলো সীমাবদ্ধ বা শুন্য আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির দ্বারা কার্যত স্বাধীন দেশ। তাদের কেউ জাতিসংঘের সদস্য নয়ঃ
পতাকা | প্রতীক | Name | আয়তন (কিমি²) |
জনসংখ্যা (২০০২-এর ১ জুলাই আনু.) |
জনসংখ্যার ঘনত্ব (প্রতি কিমি²) |
রাজধানী |
---|---|---|---|---|---|---|
আবখাজিয়া [p] | ৮,৪৩২ | ২১৬,০০০ | ২৯ | সুখুমি | ||
কসোভো [o] | ১০,৮৮৭ | ১,৮০৪,৮৩৮[১৭৯] | ২২০ | প্রিস্টিনা | ||
নাগর্নো-কারাবাখ [q] | ১১,৪৫৮ | ১৩৮,৮০০ | ১২ | স্তেপানাকের্ট | ||
উত্তর সাইপ্রাস [d] | ৩,৩৫৫ | ২৬৫,১০০ | ৭৮ | নিকোসিয়া | ||
N/A | দক্ষিণ ওশেটিয়া [p] | ৩,৯০০ | ৭০,০০০ | ১৮ | স্খিনভালি | |
N/A | ট্রান্সনিস্ট্রিয়া [a] | ৪,১৬৩ | ৫৩৭,০০০ | ১৩৩ | তিরাস্পোল |
বিস্তৃত স্বায়ত্তশাসন সহ বিভিন্ন ডিপেন্ডেন্সি এবং অনুরূপ ভূখণ্ড ইউরোপে রয়েছে। উল্লেখ্য যে, এই তালিকায় যুক্তরাজ্যের সাংবিধানিক দেশগুলো, জার্মানি ও অস্ট্রিয়া যুক্তরাষ্ট্রীয় রাজ্য, এবং স্পেনের স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল এবংচ সোভিয়েত পরবর্তি প্রজাতন্ত্র ও সার্বিয়া প্রজাতন্ত্র অন্তর্ভুক্ত নয়।
পতাকা সহ ভূখণ্ডের নাম | আয়তন (কিমি²) |
জনসংখ্যা (২০০২-এর ১ জুলাই আনু.) |
জনসংখ্যার ঘনত্ব (প্রতি কিমি²) |
রাজধানী |
---|---|---|---|---|
অলান্দ দ্বীপপুঞ্জ (ফিনল্যান্ড) | ১৩,৫১৭ | ২৬,০০৮ | ১৬.৮ | মারিহাম |
ফ্যারো দ্বীপপুঞ্জ (ডেনমার্ক) | ১,৩৯৯ | ৪৬,০১১ | ৩২.৯ | তোরশাভ |
জিব্রাল্টার (যু.রা.) | ৫.৯ | ২৭,৭১৪ | ৪,৬৯৭.৩ | জিব্রাল্টার |
গার্নসি [c] (যু.রা.) | ৭৮ | ৬৪,৫৮৭ | ৮২৮.০ | সেন্ট পিটার পোর্ট |
আইল অব ম্যান [c] (যু.রা.) | ৫৭২ | ৭৩,৮৭৩ | ১২৯.১ | ডগলাস |
জার্সি [c] (যু.রা.) | ১১৬ | ৮৯,৭৭৫ | ৭৭৩.৯ | সেন্ট হেলিয়ার |
ইউরোপীয় একত্রীকরণ সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে ইউরোপে দেশগুলোর রাজনৈতিক, আইনত, অর্থনৈতিক (এবং কিছু কিছু ক্ষেত্রে সামাজিক ও সাংস্কৃতিক) একত্রীকরণের প্রক্রিয়া। বর্তমান দিনে, ইউরোপীয় একত্রীকরণ প্রাথমিকভাবে পশ্চিম ও মধ্য ইউরোপ এবং মধ্য ও পূর্ব ইউরোপের কমনওয়েলথভুক্ত স্বাধীন রাষ্ট্র এবং সাবেক সোভিয়েত অধিকাংশ দেশের মাঝে কাউন্সিল অব ইউরোপ এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নে মাধ্যমে।
মহাদেশ হিসেবে, ইউরোপের অর্থনীতি বর্তমানে পৃথিবীর বৃহত্তম এবং ব্যবস্থাপনার অধীনে সম্পদ দ্বারা পরিমাপে $৩২.৭ ট্রিলিয়ন সহকারে ২০০৮ সালে এটি সবচেয়ে ধনী অঞ্চল, যা উত্তর আমেরিকার $২৭.১ ট্রিলিয়নের তুলনায় বেশি।[১৮০] ২০০৯ সালেও ইউরোপ সবচেয়ে ধনী অঞ্চল ছিল। ব্যবস্থাপনার অধীনে এর $৩৭.১ ট্রিলিয়ন সম্পদ বিশ্বের মোট সম্পদের এক-তৃতীয়াংশ প্রতিনিধিত্ব করে। এটা বিভিন্ন অঞ্চলে একটি যেথায় বছরের শেষ প্রাক-সংকট শিখর সম্পদ অতিক্রান্ত করে।[১৮১] অন্যান্য মহাদেশের মত, ইউরোপেও দেশগুলোর মধ্যে সম্পদের বৃহৎ প্রকরণ আছে। ধনী দেশগুলো পশ্চিমে অবস্থিত; কিছু মধ্য ও পূর্ব ইউরোপীয় অর্থনীতিগুলো এখনও সোভিয়েত ইউনিয়ন ও যুগোস্লাভিয়ার পতন থেকে উঠে দাঁড়াবার চেষ্টা করছে।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ২৮টি ইউরোপীয় দেশ নিয়ে গঠিত একটি আন্তঃসরকারি গোষ্ঠী, যা বিশ্বের বৃহত্তম একক অর্থনৈতিক এলাকা। ১৮টি ইইউ দেশ তাদের সাধারণ মুদ্রা হিসাবে ইউরো ব্যবহার করে। জিডিপিতে জাতীয় অর্থনীতি (পিপিপি) অনুসারে বিশ্বের বৃহত্তম জাতীয় অর্থনীতির শীর্ষ দশে পাঁচটি ইউরোপীয় দেশ রয়েছে। এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত (সিআইএ অনুসারে তালিকা): জার্মানি (৫), ইউকে (৬), রাশিয়া (৭), ফ্রান্স (৮), এবং ইতালি (১০)।[১৮২]
আয়ের বিচারে ইউরোপের অনেক দেশের মধ্যে বিশাল বৈষম্য আছে। মাথাপিছু জিডিপির পরিপ্রেক্ষিতে সবচেয়ে ধনী মোনাকো তার মাথাপিছু জিডিপি মার্কিন $১৭২,৬৭৬ (২০০৯) এবং দরিদ্রতম মলদোভা তার মাথাপিছু জিডিপি মার্কিন $১,৬৩১ (২০১০)।[১৮৩] মোনাকো বিশ্ব ব্যাংক রিপোর্ট অনুযায়ী মাথাপিছু জিডিপি পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্বের সবচেয়ে ধনী দেশ।
সামন্তবাদের শেষ থেকে পুঁজিবাদ পশ্চিমা বিশ্বে আধিপত্য বিস্তার করেছে।[১৮৪] ব্রিটেন থেকে, এটি ধীরে ধীরে ইউরোপ জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে।[১৮৫] ১৮ শতকের শেষে শিল্প বিপ্লব ইউরোপে বিশেষ করে যুক্তরাজ্যে,[১৮৬] এবং ১৯ শতকে পশ্চিম ইউরোপে শিল্পায়ন শুরু হয়। অর্থনীতি প্রথম বিশ্বযুদ্ধের দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হয় কিন্তু দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শুরুতে তা পুনরুউদ্ধার হয়েছে এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক শক্তি সঙ্গে প্রতিযোগিতা করার জন্য প্রস্তুত ছিলো। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে, আবারও, ইউরোপের শিল্প অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর যুক্তরাজ্যের অর্থনীতি ধ্বংসাবস্থায় ছিল,[১৮৭] এবং পরবর্তি দশকগুলোতেও আপেক্ষিক অর্থনৈতিক পতন অব্যাহত থাকে।[১৮৮] ইতালিও একটি দরিদ্র অর্থনৈতিক অবস্থার মধ্যে ছিল কিন্তু ১৯৫০-এর দশকে তা উচ্চ স্তরের প্রবৃদ্ধির দ্বারা পুনরুদ্ধার করে। পশ্চিম জার্মানি দ্রুত উঠে দাঁড়ায় এবং ১৯৫০-এর দশকে যুদ্ধপূর্ব মাত্রা থেকে উৎপাদন দ্বিগুণ করে।[১৮৯] ফ্রান্সও দ্রুত বৃদ্ধি এবং আধুনিকায়নের মাধ্যমে দারুণভাবে ফিরে আসে; পরে স্পেনে, ফ্রাঙ্কোর নেতৃত্বে উঠে আসে, তারা ১৯৬০-এর দশকে বিশাল অভূতপূর্ব অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি নথিভুক্ত হয়, যাকে স্পেনীয় অলৌকিক ঘটনা বলা হয়।[১৯০] সংখ্যাগরিষ্ঠ মধ্য ও পূর্ব ইউরোপীয় রাষ্ট্র সোভিয়েত ইউনিয়নের অধীনে আসে এবং ফলে তারা পারস্পরিক অর্থনৈতিক সহায়তা পরিষদ (COMECON)-এর সদস্য হয়।[১৯১]
যে দেশগুলো মুক্ত বাজার ব্যবস্থা বজায় রাখে, তাদের মার্শাল পরিকল্পনার অধীনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বৃহৎ পরিমাণ সাহায্য দেয়।[১৯২] পশ্চিমা দেশগুলো তাদের অর্থনীতির সংযোগ একত্রিত করে, যা ইইউ-র ভিত্তি প্রদান করে এবং সীমান্ত বাণিজ্য বৃদ্ধি করে। এটা দ্রুত অর্থনীতির উন্নতিতে সাহায্য করে, যখন কমকনের দেশগুলো সংগ্রাম করছিল, যা একটি বড় কারণ ছিলো স্নায়ু যুদ্ধের খরচ। ১৯৯০-এর আগ পর্যন্ত, ইউরোপীয় সম্প্রদায় ৬ প্রতিষ্ঠাতা সদস্য থেকে ১২-তে প্রসারিত হয়। পশ্চিম জার্মানির অর্থনীতি পুনরুত্থিত হবার ফলে এটি যুক্তরাজ্যকে টপকে ইউরোপের বৃহত্তম অর্থনীতি হিসাবে আবির্ভূত হয়।
১৯৯১ সালে মধ্য ও পূর্ব ইউরোপে কমিউনিজমের পতন দিয়ে পরবর্তি-সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রের মুক্ত বাজার সংস্কারের শুরু: পোল্যান্ড, হাঙ্গেরি, এবং স্লোভেনিয়া, যুক্তিসঙ্গতভাবে দ্রুত মানিয়ে নেয়, ইউক্রেন এবং রাশিয়ায় এই প্রক্রিয়াটি এখনও বিদ্যমান।
পূর্ব ও পশ্চিম জার্মানি ১৯৯০ সালে পুনরায় একত্রিত হবার পরে, পশ্চিম জার্মানির অর্থনীতি ধুঁকছিলো যেহেতু একে পূর্ব জার্মানিকে সহায়তা এবং অবকাঠামো পুনর্নির্মাণ করতে হয়েছিল।
সহস্রাব্দের পরিবর্তনের সময়, ইইউ ইউরোপের অর্থনীতি আধিপত্য বিস্তার করে পাঁচটি বৃহত্তম ইউরোপীয় অর্থনীতির সমন্বয়ে গঠনের মাধ্যমে যেমন জার্মানি, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, ইতালি, ও স্পেন। ১৯৯৯ সালে, ইইউ-এর ১৫টি সদস্যের মধ্যে ১২টি সদস্য রাষ্ট্র ইউরোজোনে যোগদান করে, তাদের সাবেক জাতীয় মুদ্রা পরিবর্তন করে সাধারণ ইউরো গ্রহণ করার মাধ্যমে। ইউরোজোনের বাইরে থাকা বেছে নেওয়া তিনটি দেশ হলো: যুক্তরাজ্য, ডেনমার্ক, এবং সুইডেন। ইউরোপীয় ইউনিয়ন এখন বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতি।[১৯৩]
২০০৯-এর জানুয়ারিতে ইউরোস্ট্যাটের তথ্য প্রকাশ দ্বারা নিশ্চিত হয় যে, ২০০৮ সালের তৃতীয় ত্রৈমাসিকে ইউরোজোন অর্থনৈতিক মন্দার মধ্যে পড়ে।[১৯৪] অধিকাংশ অঞ্চলের এর প্রভাব পড়ে।[১৯৫] ২০১০ সালের প্রথম দিকে, সার্বভৌম ঋণ সঙ্কটের ভয়[১৯৬] ইউরোপের কিছু দেশে, বিশেষ করে গ্রিস, আয়ারল্যান্ড, স্পেন, পর্তুগালে আক্রমণ করে।[১৯৭] এর ফলে, ইউরোজোনের নেতৃস্থানীয় দেশগুলো কিছু পদক্ষেপ, বিশেষ করে গ্রিসের জন্য গ্রহণ করা হয়।[১৯৮]
ইইউ-২৭ এর বেকারত্বের হার ২০১২ সালের এপ্রিলে ১০.৩% ছিল।[১৯৯] সাম্প্রতিক বিশ্ববিদ্যালয় স্নাতকরা কাজ খুঁজে পায় না।[২০০] ২০১২ সালের এপ্রিলে, ইইউ২৭-এ ১৫–২৪ বছর বয়সী মধ্যে বেকারত্বের হার ২২.৪% ছিল।[১৯৯]
রেনেসাঁস থেকে, ইউরোপ বিশ্বের সংস্কৃতি, অর্থনীতি ও সামাজিক আন্দোলনে একটি উল্লেখযোগ্য প্রভাব রেখেছে। পশ্চিমা বিশ্বেই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কারগুলো উদ্ভাবিত হয়, বিশেষ করে ইউরোপ এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে।[২০২][২০৩] প্রায় ৭০ মিলিয়ন (৭ কোটি) ইউরোপীয় ১৯১৪ থেকে ১৯৪৫-এর মধ্যে যুদ্ধ, সহিংসতা ও দুর্ভিক্ষে মারা যায়।[২০৪] ইউরোপীয় জনমিতি মধ্যে কিছু বর্তমান এবং অতীত বিষয়; ধর্মীয় প্রবাস, জাতি সম্পর্ক, অর্থনৈতিক অভিবাসন, নিম্নগামী জন্মহার এবং বার্ধক্যগ্রস্ত জনসংখ্যা অন্তর্ভুক্ত আছে।
কিছু দেশে, যেমন আয়ারল্যান্ড এবং পোল্যান্ডে গর্ভপাত করার সুযোগ সীমাবদ্ধ। এটা মাল্টায় অবৈধ। উপরন্তু, তিনটি ইউরোপীয় দেশ (নেদারল্যান্ড, বেলজিয়াম, এবং সুইজারল্যান্ড) এবং আন্দালুসিয়ার স্বায়ত্তশাসিত প্রদেশে (স্পেন)[২০৫][২০৬] অসুস্থ মানুষের জন্য স্বেচ্ছায় যন্ত্রণাহীন মৃত্যুর সীমিত আকারে অনুমতি দেওয়া হয়।
২০০৫ সালে, ইউরোপে জনসংখ্যা জাতিসংঘের মতে ৭৩১ মিলিয়ন বলে অনুমান করা হয়েছিল[২০৭], যা বিশ্বের জনসংখ্যার এক-নবমাংশে তুলনায় সামান্য বেশি। এক শতাব্দী আগে, ইউরোপ বিশ্বের জনসংখ্যার প্রায় এক-চতুর্থাংশ ছিল।[২০৮] ইউরোপের জনসংখ্যা গত শতাব্দীতে বেড়েছে, কিন্তু বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলে (বিশেষ করে আফ্রিকা এবং এশিয়ায়) জনসংখ্যা অনেক দ্রুত হারে বৃদ্ধি পেয়েছে।[২০৭] মহাদেশগুলোর মধ্যে, ইউরোপে জনসংখ্যার ঘনত্ব অপেক্ষাকৃত উচ্চ, দ্বিতীয় অবস্থানে শুধুমাত্র এশিয়ার পরে। ইউরোপের (এবং বিশ্বের) সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ দেশ মোনাকো। প্যান ও ফেল (২০০৪) গণনা করে, ৮৭ স্বতন্ত্র "ইউরোপের জাতি", যার মাঝে ৩৩টি কমপক্ষে একটি সার্বভৌম রাষ্ট্রের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগোষ্ঠী, অবশিষ্ট ৫৪টি জাতিগত সংখ্যালঘু।[২০৯] জাতিসংঘ জনসংখ্যা অভিক্ষেপ মতে, ইউরোপের জনসংখ্যা ২০৫০ সাল নাগাদ বিশ্বের জনসংখ্যার প্রায় ৭% হতে পারে, অথবা ৬৫৩ মিলিয়ন মানুষ (মাঝারি বৈকল্পিক, ৫৫৬ থেকে ৭৭৭ মিলিয়ন কম এবং উচ্চ রূপের মধ্যে যথাক্রমে)।[২০৭] এই প্রেক্ষাপটে উর্বরতা হার সম্পর্কিত বৈষম্য অঞ্চলগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্যভাবে বিদ্যমান। শিশু জন্মদান জন্মদানে সক্ষম মহিলা প্রতি গড় শিশুর সংখ্যা ১.৫২।[২১০] কিছু সূত্র মতে,[২১১] এই হার ইউরোপের মুসলমানদের মধ্যে বেশি। জাতিসংঘ পূর্বানুমান মতে, দেশান্তর এবং নিম্ন জন্মহারের ফলে মধ্য ও পূর্ব ইউরোপের নিয়মিত জনসংখ্যা হ্রাস পাবে।[২১২]
আইওএম-এর রিপোর্ট অনুসারে, বিশ্বব্যাপী অভিবাসীদের মধ্যে সর্বোচ্চসংখ্যক ৭০.৬ মিলিয়ন মানুষ ইউরোপে আসে।[২১৩] ২০০৫ সালে, ইইউ সামগ্রিক জনসংখ্যা বৃদ্ধি ছিল অভিবাসন থেকে ১.৮ মিলিয়ন মানুষ। যা ইউরোপের মোট জনসংখ্যা বৃদ্ধির প্রায় ৮৫%।[২১৪] ইউরোপীয় ইউনিয়ন আফ্রিকা থেকে বৈধ অভিবাসী শ্রমিকদের জন্য কাজ কেন্দ্র খোলার পরিকল্পনা করে।[২১৫][২১৬] ২০০৮ সালে, ৬৯৬,০০০ জনকে ইউ২৭ সদস্য রাষ্ট্রের নাগরিকত্ব দেওয়া হয়, যা পূর্ববর্তী বছর থেকে কম (৭০৭,০০০)।[২১৭]
ইউরোপ থেকে দেশান্তর হওয়া শুরু হয় ১৬ শতকে স্প্যানিশ ও পর্তুগিজ বসতি স্থাপকারীদের মাধ্যমে,[২১৮][২১৯] এবং ১৭ শতকের মধ্যে ফরাসি এবং ইংরেজি ঔপনিবেশিকদের সাথে।[২২০] কিন্তু এর সংখ্যা অপেক্ষাকৃত ক্ষুদ্র ছিল, ১৯ শতকের মধ্যে ব্যাপক দেশান্তর শুরু হয় যখন লক্ষ লক্ষ দরিদ্র পরিবার ইউরোপ ছেড়ে যায়।[২২১]
আজ, ইউরোপীয় বংশোদ্ভূত বিশাল জনসংখ্যা প্রতি মহাদেশে পাওয়া যায়। ইউরোপীয় বংশোদ্ভূতরা উত্তর আমেরিকায় প্রাধান্য বিস্তার করে, ও দক্ষিণ আমেরিকায় কম মাত্রায় (বিশেষ করে উরুগুয়ে, আর্জেন্টিনা, চিলি এবং ব্রাজিলে, অন্যান্য অধিকাংশ ল্যাটিন আমেরিকান দেশে ইউরোপীয় বংশোদ্ভূত উল্লেখযোগ্য জনসংখ্যা আছে)। অস্ট্রেলিয়া এবং নিউজিল্যান্ডে বৃহৎ ইউরোপীয় উদ্ভূত জনগোষ্ঠী আছে। আফ্রিকায় কোনো দেশেই ইউরোপীয়-উদ্ভূত সংখ্যাগরিষ্ঠতা নেই, (ব্যতিক্রম কেপ ভার্দ এবং সম্ভবত সাঁউ তুমি ও প্রিন্সিপি বাদে, প্রসঙ্গের উপর নির্ভর করে), কিন্তু উল্লেখযোগ্য সংখ্যালঘু আছে, যেমন দক্ষিণ আফ্রিকার শ্বেতাঙ্গ। এশিয়ায়, ইউরোপীয়-উদ্ভূত জনগোষ্ঠী উত্তর এশিয়ায় (বিশেষ করে রুশরা), উত্তর কাজাখস্তান ও ইসরাইলের কিছু অংশে প্রাধান্য বিস্তার করে।[২২২] উপরন্তু, আন্তর্মহাদেশীয় বা ভৌগোলিক দিক থেকে এশিয়ার দেশগুলোতে যেমন জর্জিয়া, আর্মেনিয়া, আজারবাইজান, সাইপ্রাস এবং তুরস্ক-এ ঐতিহাসিকভাবে ইউরোপীয়দের সাথে ঘনিষ্ঠ, যথেষ্ট জেনেটিক ও সাংস্কৃতিক ঐক্য সঙ্গে সম্পর্কিত জনসংখ্যা আছে।
ইউরোপীয় ভাষাসমূহ বেশিরভাগই তিনটি ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষা গোষ্ঠীর মধ্যে পড়ে: রোমান্স ভাষাসমূহ, রোমান সাম্রাজ্যের লাতিন থেকে উদ্ভূত; জার্মানিয় ভাষাসমূহ, যার পূর্বপুরুষ ভাষা দক্ষিণ স্ক্যান্ডিনেভিয়ার থেকে এসেছে; এবং স্লাভীয় ভাষাসমূহ।[১৬৯]
স্লাভীয় ভাষাসমূহ ইউরোপের স্থানীয়দের দ্বারা সবচেয়ে বেশি কথ্য, এসব ভাষায় মধ্য, পূর্ব, এবং দক্ষিণ-পূর্ব ইউরোপে কথা বলা হয়। রোমান্স ভাষায় মধ্য বা পূর্ব ইউরোপ এবং রোমানিয়া ও মলদোভা সহ, প্রাথমিকভাবে দক্ষিণ-পশ্চিম ইউরোপে কথা বলা হয়। জার্মানিয় ভাষাসমূহ উত্তরাঞ্চলীয় ইউরোপ, ব্রিটিশ দ্বীপপুঞ্জ ও মধ্য ইউরোপের কিছু অংশে কথ্য হয়।[১৬৯]
তিনটি প্রধান গোষ্ঠীর বাইরে অন্য অনেক ভাষা ইউরোপের মধ্যে বিদ্যমান। অন্যান্য ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষা অন্তর্ভুক্ত বাল্টিক গোষ্ঠী (যা, লাটভীয় ও লিথুয়ানিয়), কেল্টীয় গোষ্ঠী (যা, আইরিশ, স্কট্স গ্যালিক, মানক্স, ওয়েলশ, কর্নিশ, ও ব্রেটন[১৬৯]), গ্রিক, আর্মেনীয়, ও আলবেনীয়। উপরন্তু, উরালীয় ভাষাসমূহ-এর একটি স্বতন্ত্র গোষ্ঠী (এস্তোনীয়, ফিনীয়, ও হাঙ্গেরীয়) ইস্তোনিয়া, ফিনল্যান্ড, ও হাঙ্গেরিতে প্রধানত কথিত হয়, যখন কার্তভেলিয়ান ভাষাসমূহ (জর্জিয়, মিনগ্রেলিয়ান, ও সভান), জর্জিয়ায় প্রাথমিকভাবে কথ্য হয়, এবং দুইটি অন্যান্য ভাষা পরিবারের উত্তর ককেশাসে বিদ্যমান (বলা হয় উত্তরপূর্ব ককেশীয়, এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল চেচেন, আভার ও লেযগিন এবং উত্তর-পশ্চিম ককেসীয়, এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল আদিগে)। মল্টিয় একমাত্র সেমিটিক ভাষা যা ইইউর দাপ্তরিক ভাষা, অন্যদিকে বাস্ক একমাত্র বিছিন্ন ইউরোপীয় ভাষা। তুর্কীয় ভাষাসমূহ-এর অন্তর্ভুক্ত আজারবাইজানি ও তুর্কি, এর সাথে রাশিয়ায় সংখ্যালঘু জাতির ভাষা।
বহুভাষাবাদ এবং আঞ্চলিক ও সংখ্যালঘু ভাষার সুরক্ষা এসময়ে ইউরোপে রাজনৈতিক লক্ষ্য হিসেবে স্বীকৃত। কাউন্সিল অব ইউরোপ ইউরোপে ভাষা অধিকারের জন্য একটি আইনি কাঠামো গঠন করে।
ঐতিহাসিকভাবে, ইউরোপে ধর্ম এর শিল্প, সংস্কৃতি, দর্শন ও আইনের উপর উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলেছে। ইউরোপের বৃহত্তম ধর্ম খ্রিস্ট ধর্ম, ৭৬.২% ভাগ ইউরোপীয় খ্রিষ্টান,[২২৩] এর মাঝে অন্তর্ভুক্ত ক্যাথলিক, ইস্টার্ন অর্থোডক্স এবং প্রোটেস্ট্যান্ট গীর্জা। এছাড়াও ইসলাম মূলত বলকান এবং পূর্ব ইউরোপের কেন্দ্রীভূত (বসনিয়া ও হার্জেগোভিনা, আলবেনিয়া, কসোভো, কাজাখস্তান, উত্তর সাইপ্রাস, তুরস্ক, আজারবাইজান, উত্তর ককেশাস, এবং ভলগা-ইউরাল অঞ্চল)। অন্যান্য ধর্মের মধ্যে ইহুদি ধর্ম, হিন্দুধর্ম, এবং বৌদ্ধ ধর্ম সংখ্যালঘু ধর্ম (যদিও তিব্বতী বৌদ্ধ রাশিয়ার কালমাকিয়া প্রজাতন্ত্রের সংখ্যাগরিষ্ঠ ধর্ম)। ২০ শতকের আন্দোলন মাধ্যমে নিও প্যাগানবাদের পুনর্জন্ম হয়।
ইউরোপ তুলনামূলকভাবে ধর্মনিরপেক্ষ মহাদেশে পরিণত হয়েছে, ধর্মহীন, নাস্তিক এবং অজ্ঞেয়বাদী মানুষের ক্রমবর্ধমান সংখ্যা অনুপাত মাধ্যমে, আসলে যা পশ্চিমা বিশ্বের মাঝে বৃহত্তম। বিপুল সংখ্যক স্ব-বর্ণিত ধর্মহীন মানুষ চেক প্রজাতন্ত্র, ইস্তোনিয়া, সুইডেন, জার্মানি (পূর্ব), এবং ফ্রান্সে রয়েছে।[২২৪]
ইউরোপের সংস্কৃতি একটি ধারাবাহিক সংস্কৃতির অধিক্রমণ হিসাবে বর্ণনা করা যেতে পারে; সাংস্কৃতিক মিশ্রণ মহাদেশ জুড়ে বিদ্যমান। সাংস্কৃতিক উদ্ভাবন এবং আন্দোলন, কখনও কখনও একে অপরের সঙ্গে মতভেদ হয়। সুতরাং সাধারণ সংস্কৃতি বা অভিন্ন মূল্যবোধ-এর ব্যাপারটি বেশ জটিল।
ঐতিহাসিক হিলারী বেলকের মতে, রোমান সংস্কৃতির অবশিষ্ট চিহ্ন এবং খ্রীষ্টান ধারণার উপর কয়েক শতাব্দী ধরে ইউরোপের মানুষ তাদের আত্ম-পরিচয় ভিত্তি করে গড়ে উঠে, কারণ অনেক ইউরোপীয় ব্যাপী সামরিক জোট ধর্মীয় প্রকৃতির ছিল, ক্রুসেড (১০৯৫–১২৯১), রিকনকুইসতার (৭১১–১৪৯২), লেপান্তোর যুদ্ধ (১৫৭১)।[২২৫]
The Byzantine Empire also interacted with the world of Islam to its east and the new European civilization of the west. Both interactions proved costly and ultimately fatal.
These Christian allies did not accept the authority of Byzantium, and the Fourth Crusade that sacked Constantinople and established the so-called Latin Empire that lasted until 1261 was a fatal wound from which the empire never recovered until its fall at the hands of the Ottoman Turks in 1453 (Queller and Madden 1997).
And though the final blow was struck by the Ottoman Turks, it can plausibly be argued that the fatal injury was inflicted by the Latin crusaders in 1204.
continue to stand for another 250 before ultimately falling to the Muslim Turks, but it had been irrevocably weakened by the Fourth Crusade.
1204 The Fourth Crusade sacks Constantinople, destroying and pillaging many of its treasures, fatally weakening the empire both economically and militarily
However, the fifty-seven years of plunder that followed made the Byzantine Empire, even when it retook the capital in 1261, genuinely weak. Beginning in 1222, the empire was further weakened by a civil war that lasted until 1355. ... When the Ottomans overran their lands and besieged Constantinople in 1453, sheer poverty and weakness were the causes of the capital city's final fall.
Not only did the fourth crusade further harden the resentments Greek-speaking Christians felt toward the Latin West, but it further weakened the empire of Constantinople, many say fatally so. After the restoration of Greek imperial rule the city survived as the capital of Byzantium for another two centuries, but it never fully recovered.
Although the empire was revived, the events of 1204 had so weakened Byzantium that it was no longer a great power.
Later they established themselves in the Anatolian peninsula at the expense of the Byzantine Empire. ... The Byzantines, however, had been severely weakened by the sack of Constantinople in the Fourth Crusade (in 1204) and the Western occupation of much of the empire for the next half century.
Western Christians, not Muslims, fatally crippled Byzantine power and opened Islam's path into the West.
... two-and-a-half centuries to recover from the Fourth Crusade before the Ottomans finally took Constantinople in 1453, ... They fatally wounded Byzantium, which was the main cause of its weakened condition when the Muslim onslaught came. Even on the eve of its final collapse, the precondition for any Western help was submission in Florence.
|doi=10.1080/21533369.2001.9668313
সহ {{সাময়িকী উদ্ধৃতি}} ব্যবহার করুন।